বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর সাবেক পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদকে অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলন থেকে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব খালিদ জাহাঙ্গীর, সদস্য আল মামুন রাজু ও মোহাম্মদ বুরহান উদ্দীনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার জেলা প্রশাসকের কক্ষের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর সাবেক পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদকে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি থেকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলমান রয়েছে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। রোববার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে চলা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির আলোচনার কিছু তথ্য বাইরে প্রকাশ হওয়ায় আন্দোলনকারীরা রাতেই তাদের কর্মসূচি সোমবার পালনের ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় কালেক্টরেটের দ্বিতীয় তলায় জেলা প্রশাসকের কক্ষের সামনে আন্দোলনকারীরা বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। সে সময়ে জেলা প্রশাসকের কক্ষে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির জরুরি সভা চলছিল। এই সভার মূল বিষয় ছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে কাউন্সিলর হিসেবে কার নাম প্রেরণ করা হবে।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন, ক্রীড়া সংগঠক মাহতাব নাসির পলাশ, মুনির সিদ্দিকী বাচ্চু, এজাজ উদ্দিন টিপু। এ সময় উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক খান মোহাম্মদ শফিক রতন, এ, বি, এম আখতারুজ্জামান, মাসুক মোহাম্মদ সাথী, সোহেল মাসুদ হাসান টিটো, সোহেল আল মামুন নিশাদ, হিমাদ্রী সাহা মনি, রায়হান সিদ্দিকী, মনিরুজ্জামান মিন্টু, শামীম এজাজ, শরিফুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, হালিম রেজা, কাজী জামাল, জয় সাহা প্রমুখ।
বক্তব্যে তারা বলেন, অবিলম্বে কাজী ইনাম আহমেদকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। প্রয়োজনে আরো কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। শুধু তাই নয়, জেলার সকল ক্রীড়া কার্যক্রম বন্ধ করার হুশিয়ারি দেন তারা। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে কাউন্সিলর হিসেবে প্রেরিত শান্তনু ইসলাম সুমিতের নাম যাতে বহাল থাকে সে বিষয়ে অনড় ছিলেন।
জেলা প্রশাসকের কক্ষে এ সময় চলা অ্যাডহক কমিটির সভার কিছু আলোচনার বিষয় বাইরে প্রকাশ হলে আন্দোলনকারীরা প্রথম দফায় অ্যাডহক কমিটির সদস্য আল মামুন রাজু ও মোহাম্মদ বুরহান উদ্দীনকে অবৈধভাবে অ্যাডহক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে দাবি তুলে তাদেরকেও অপসারণের দাবি তোলেন। তার কিছু সময় পরে আবারো সভার কিছু বিষয় আন্দোলনকারীদের কাছে পৌঁছালে দ্বিতীয় দফায় অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব খালিদ জাহাঙ্গীরকে অপসারণের দাবি তোলা হয়। পরে তাদেরকে জেলার ক্রীড়াঙ্গনে অবঞ্চিত ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা।
অ্যাডহক কমিটির সভা শেষে নিজ কক্ষ থেকে বাইরে এসে আন্দোলনকারীদের কথা শোনেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, অ্যাডহক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমার কোন ভূমিকা নেই। এটা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিষয়। আপনারা যে দাবিতে এখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন আপনাদের এসব বিষয়গুলো আমি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অবহিত করবো। এছাড়া আপনারা যারা দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক তাদের অবশ্যই জেলার ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতির জন্য প্রয়োজন। আপনারা যাতে অবমূল্যায়িত না হন সে ব্যাপারে আমি সব সময় সচেষ্ট থাকবো।
এরপর আন্দোলনকারীরা অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে আন্দোলন কর্মসূচি কি হবে তা পরে জানানো হবে বলে জানান ক্রীড়া সংগঠক মাহাতাব নাসির পলাশ।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৪ তারিখে দৈনিক গ্রামের কাগজে আল মামুন রাজু ও মোহাম্মদ বুরহান উদ্দীনকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উপর অর্পিত ক্ষমতা অনুসারে অন্তর্ভুক্তি করায় নিউজ প্রকাশিত হয়। তখন তাদের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে কোন আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। হঠাৎ করে তাদের অপসারণ ও অবঞ্চিত ঘোষণা নিয়ে কেউ কেউ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি মাসের ১০ তারিখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে কাউন্সিলর হিসেবে শান্তনু ইসলাম সুমিতের নাম প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে জানা যায় অ্যাডহক কমিটির সদস্য ছাড়া কারো নাম প্রেরণ করা যাবে না। এই তথ্য সামনে আসার পর ক্রীড়াঙ্গনের চাউর হতে শুরু করে অ্যাডহক কমিটি থেকে শ্রীনিবাস হালদারকে বাদ দিয়ে অন্তর্ভূক্ত হওয়া কাজী ইনাম আহমেদ কাউন্সিলর হতে যাচ্ছেন।
গত রোববার কাজী ইনাম আহমেদের কাউন্সিলর সংক্রান্ত ফরম জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরের জন্য জনৈক ব্যক্তি নিয়ে আসেন। সেই পত্রে কোন স্বাক্ষর করেননি জেলা প্রশাসক। সোমবার কাউন্সিলর প্রেরণের শেষদিন। এসব বিবেচনায় জেলা প্রশাসক তার বাসভবনে অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করেন রোববার সন্ধ্যায়। সেখানে কোন সমাধান না হওয়ায় সোমবার জেলা প্রশাসকের কক্ষে অ্যাডহক কমিটির জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় দু’জন সদস্য শান্তনু ইসলাম সুমিতের পক্ষে অবস্থান নেন। অন্যদিকে, অ্যাডহক কমিটির সদস্য খালিদ জাহাঙ্গীর তার মতামতে জানান, যেহেতু অ্যাডহক কমিটির সদস্য ছাড়া কেউ কাউন্সিলর হিসেবে মনোনীত হবেন না, সে কারণে আমাদের অ্যাডহক কমিটিতে একজন সাবেক ক্রিকেটার রয়েছেন তার নাম প্রস্তাব করা যেতে পারে। তার সাথে একমত পোষণ করেন অ্যাডহক কমিটির সদস্য সামিউল আলম শিমুল ও মুহাম্মদ বুরহান উদ্দীন।
এসব নানা আলোচনার প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত যদি নতুন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কাউন্সিলর ফরম প্রেরণ করলে সেক্ষেত্রে আল মামুন রাজুর নাম প্রস্তাব করা হবে বলে অ্যাডহক কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে, অবঞ্চিত ঘোষণার বিষয়ে মোহাম্মদ বুরহান উদ্দীন জানান, আন্দোলনকারীরা কি ঘোষণা দিয়েছে তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে আল মামুন রাজু জানান, বিষয়টি শুনেছি। যারা আন্দোলন করছেন তাদের আন্দোলনের সাথে তো আমি ব্যক্তিগতভাবে সহমত পোষণ করি। আন্দোলনকারীরা আমার অভিভাবক তুল্য। তাদেরকে আমি সম্মান করি। আমার কোন ভুল থাকতেই পারে। সেই ভুলগুলো অভিভাবক হিসেবে তারা আমাকে সংশোধন করে দিলে তা আমি গ্রহণ করতে বাধ্য। আমার দ্বারা ক্রীড়াঙ্গনে কেউ অসম্মানিত হোক এটা আমার কাম্য নয়।