Friday, December 5, 2025

চৌগাছায় বলু দেওয়ানের মেলার শুরুতেই জুয়ার আসর, ধাওয়া দিয়ে উচ্ছেদ

বুধবার থেকে শুরু হয়েছে যশোরের চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী বলু দেওয়ানের মেলা। সবাই যখন সুষ্ঠুভাবে মেলা পরিচালনার জন্য একতাবদ্ধ, ঠিক সেই সময় একটি গোষ্ঠী মেলাকে কেন্দ্র করে জুয়ার আসর বসায়। খেলা চলাকালীন সময়েই স্থানীয়দের ও পুলিশের তোপের মুখে জুয়া খেলা বন্ধ করা হয়। পরে তারা সটকে পড়ে। এ সময় দর্শনার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক পক্ষ চাইছে আবারও আসর বসাতে, অন্যদিকে সবাই একত্র হয়ে বলছে মেলায় কোনোভাবেই জুয়া হতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতা থেকে শুরু করে আয়োজক কমিটির নেতাকর্মীরাও।

এই স্থানটিতে জুয়ার আসর বসানো হয়েছিলো।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, মেলা চলাকালীন বিকেল থেকেই কয়েকজন যুবক হাজরেখানা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অদূরে জুয়া খেলা শুরু করে। তারা প্রচার করেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ইসলামুল হক চঞ্চলের নির্দেশে জুয়ার আসর বসানো হয়েছে। এমনকি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান ও সদস্যসচিব আবু বক্করও তাদের সঙ্গে রয়েছেন। এ সময় তাদের অনুসারীরাও সেখানে অবস্থান নেয়। ফলে কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। তবে, ধীরে ধীরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে স্থানীয়দের মাঝে। সন্ধ্যার পর প্রকাশ্যেই কয়েকজন বলতে থাকেন, এতদিন এ মেলায় জুয়া হয়নি, এখন কেন

রওজা শরীফ

জুয়া খেলা হচ্ছে। তাঁদের কথায় সুর তোলেন স্থানীয় আরও কয়েকজন। ঠিক সেই সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজক কমিটির নেতাসহ স্থানীয় বিএনপি নেতারা বৈঠক করছিলেন। পাশেই ছিল পুলিশ। সবাই একসঙ্গে হয়ে জুয়ার আসর বন্ধ করে দেয়। এরপর ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে সবাই। এ সময় এলাকায় থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তখন স্থানীয়রা তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

একেরপর এক চলছে সাংস্কৃতিক আয়োজন

এলাকার প্রবীণ রবিউল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বলুর মেলা দীর্ঘ ২০-২২ বছর ধরে দেখছি, যা আমাদের প্রাণের সঙ্গে মিশে আছে। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় মানুষ আসে আনন্দ নিতে। যা যুগ যুগ ধরে চলছে। জুয়ার আসর থাকলে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে বাড়ি ফিরবে। মেলার ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। যা মেনে নেওয়ার নয়।

হরেক রকম খাবারের দোকান বসেছে

মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, মেলায় জুয়ার আসর কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না। যারা এমন কাজের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাদের বরদাশত করা হবে না।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, জুয়ার বিষয়টি কে বা কারা বসিয়েছে জানি না, তবে শুনেছি। এটি ঠিক হয়নি।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান বলেন, এখানে জুয়ার আসর বসালেও প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ইসলামুল হক চঞ্চল রাতদিন নিউজকে বলেন, আমি আজ মেলায়ই যাইনি। এছাড়া চৌগাছার কোনো বিষয়ে আমি হস্তক্ষেপও করি না। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

বিভিন্ন পন্যের পসরা বসিয়েছে দোকানীরা

একইভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার নামে অপপ্রচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, সদস্য সচিব আবু বক্করকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

বিষয়টি নিয়ে চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, জুয়ার আসর বসানো হয়েছে এমন সংবাদ পেয়েই পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযানে নামে। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে জুয়াড়িদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ৬০ জন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তারা পুরো মেলা প্রাঙ্গণে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সহযোগিতা করছেন মেলা আয়োজক কমিটিসহ স্থানীয় বিএনপি নেতারা। চঞ্চল, মেহেদী ও বক্করের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে মেলার পরিবেশ নষ্ট করতে এলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য,বলু দেওয়ানের মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। এ মেলা ১০ দিন চলবে বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি।

ওয়াসিম হোসেন

 

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর