পদার্থবিজ্ঞানের জগতে শতাব্দীপ্রাচীন এক বিতর্কের অবসান ঘটালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকেরা। কোয়ান্টাম মেকানিকসের এক রহস্যজনক দিক ‘এনট্যাঙ্গেলমেন্ট’ বা কণা-জট পাকানো নিয়ে দীর্ঘদিনের সংশয় দূর করে তাঁরা দেখিয়েছেন—দুটি কণা কতই না দূরে থাকুক, তারা তাৎক্ষণিকভাবে একে অপরকে প্রভাবিত করতে পারে।
এই ফলাফল সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছে কিংবদন্তি বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের একটি মৌলিক ধারণাকে। আইনস্টাইন বরাবরই কোয়ান্টাম জটের বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। তাঁর মতে, কণা দুটির মধ্যে যদি তাৎক্ষণিক মিথস্ক্রিয়া ঘটে, তবে নিশ্চয়ই কোনো ‘লুকানো চলক’ বা Hidden Variable কাজ করছে, যা এখনও আমরা ধরতে পারিনি। ১৯৩৫ সালে বরিস পোডলস্কি ও নাথান রোজেনের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে তিনি কোয়ান্টাম তত্ত্বকে ‘অসম্পূর্ণ’ বলেও উল্লেখ করেন।
কিন্তু এমআইটির সাম্প্রতিক গবেষণায় আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় প্রমাণিত হয়েছে, এই কণা-জট কোনো লুকানো কারণে নয়, বরং প্রকৃতই কোয়ান্টাম স্তরের বৈশিষ্ট্য। ক্ল্যাসিক্যাল পদার্থবিদ্যার নিয়ম যেখানে এমন তাৎক্ষণিক প্রভাবকে অস্বীকার করে, সেখানে এই নতুন গবেষণা একেবারে ভিন্ন বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি নিয়ে নানা পরীক্ষা চালিয়ে এলেও সেগুলোর মধ্যে ছিল নানা সীমাবদ্ধতা ও ভুলের সুযোগ। এবার এমআইটির গবেষকেরা পুরোনো সব ত্রুটি দূর করে এক নিখুঁত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন—কোয়ান্টাম কণাগুলোর মধ্যে রয়েছে এক ধরনের ‘ভয়ংকর সুন্দর’ সম্পর্ক, যা স্থান-কাল পেরিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে।
এই আবিষ্কার শুধু আইনস্টাইনের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করেই থেমে থাকেনি, বরং কোয়ান্টাম মেকানিকসের ভবিষ্যৎ প্রয়োগ ও প্রযুক্তিতে এক নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দিয়েছে। গবেষকেরা মনে করছেন, এ নিয়ে আরও অনুসন্ধান ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, নিরাপদ যোগাযোগ প্রযুক্তি ও পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক রূপ বোঝার পথে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।







