স্টাফ রিপোর্টার, বাঘারপাড়া (যশোর): যশোরের বাঘারপাড়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে স্থাপিত নলকূপ খননের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো রোরিং ফ্লুইড হিসেবে গোবর মেশাচ্ছে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অথচ, সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে, এই কাজে শুধুমাত্র বেন্টোনাইট-ক্লে মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে হবে।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে ৫০টিরও বেশি নলকূপ খনন শেষ হয়েছে। এসব নলকূপ বসাতে ঠিকাদাররা বেন্টোনাইটের পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা কিংবা উপকারভোগীদের দিয়ে কিনিয়ে আনা গোবর ব্যবহার করছে। এতে একদিকে যেমন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দূষণের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ‘খাবার’ ও ‘বখশিস’ বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩৪টি ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০৮টি নলকূপ বরাদ্দ পেয়েছে বাঘারপাড়া উপজেলা। প্রতিটি নলকূপে সরকারের ব্যয় প্রায় ১ লাখ টাকা, যার মধ্যে থাকে ৬০০ ফুট পাইপ, ১ হর্স পাওয়ার পাম্প, ১টি ১০০০ লিটারের পানির ট্যাংকি, ২০ কেজি বেন্টোনাইট-ক্লে ও একটি স্ট্যান্ড।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, নলকূপ বোরিংয়ের সময় শুধুমাত্র বেন্টোনাইট-ক্লে মিশ্রিত পানি ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। এমনকি নির্দেশনাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে—গোবর ব্যবহার করা হলে কাজ বন্ধ রাখতে হবে, কারণ তা ভূগর্ভস্থ পানির জন্য দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রতিটি স্থানে গোবর মিশিয়ে নলকূপ বসাচ্ছে। বেশির ভাগ উপকারভোগীকে নিজের খরচে ২-৩ হাজার টাকার গোবর কিনে দিতে হচ্ছে। এমনকি ঠিকাদারদের শ্রমিকদের জন্য একাধিক দিন খাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
ধলগ্রামের রকিব উদ্দিন জানান, “নলকূপ বসাতে তিনদিনে ১৩ জন শ্রমিককে খাওয়াতে হয়েছে। শুধু প্রথম দিনের কেক আর মাংসের খাবারে খরচ হয়েছে ৪৫০ টাকা। পরে ২০০ ঝুড়ি গোবর এনে দেওয়ার পর তারা নলকূপ বসিয়েছে। সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে।”
নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কিরামত আলী এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, “শ্রমিকদের খাবার মাদরাসা থেকে দিতে হয়েছে। নলকূপের বোরিং হয়েছে গোবর দিয়েই।”
অভিযোগ রয়েছে নাহার কনস্ট্রাকশন (বরিশাল), এস এম এন্টারপ্রাইজ (উত্তরা, ঢাকা) এবং এম এম এন্টারপ্রাইজ (গোপালগঞ্জ) এই তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঘারপাড়ায় নলকূপ স্থাপনের কাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা অধিদপ্তরের আদেশ উপেক্ষা করে নিজের মতো করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, জনস্বাস্থ্য অফিসের কর্মকর্তারাই বেন্টোনাইট ব্যবহার না করতে বলছেন, বরং বোঝাচ্ছেন এতে নলকূপ নষ্ট হবে। আবার শ্রমিকরা ভয় দেখাচ্ছে “গোবর না দিলে বোরিং হবে না”।
নাহার কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার জাকারিয়া ও এম এম এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ খান দাবি করেছেন, আমরা বেন্টোনাইট-ক্লে ব্যবহার করছি। তবে শ্রমিকরা খাবার কীভাবে নিচ্ছে, সেটা জানি না।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অন্তরা সরকার বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর জেলা জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী আকমাল হোসেন বলেন, নলকূপ খননে গোবর ব্যবহার নীতিমালার পরিপন্থী। এ ধরনের অনিয়মের তথ্য পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর শ্রমিকদের খাবারের দায়িত্ব ঠিকাদারের।







