শ্যামল দত্ত, চৌগাছা (যশোর): যশোরের চৌগাছা উপজেলায় কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জনজীবন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ, কৃষক ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ।
বুধবার (১৭ জুলাই) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, নিচু অঞ্চলের ঘরবাড়িতে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে আছে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টিতে তাদের সবজির ক্ষেত ও আউশ ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সবজির উৎপাদনও মারাত্মকভাবে কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
চাষি তারেক শেখ জানান, “যদি বৃষ্টি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ফলন আরও কমে যাবে। এতে বাজারে সবজির দাম বাড়বে এবং কৃষক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি ভোক্তারাও ভোগান্তিতে পড়বেন।”
বাজারে ইতোমধ্যে কাঁচামরিচ, উচ্ছে, করলা, পুঁইশাক, পটল, কচু, ডাটা, রূপবান সিম, ড্রাগন, ঝিঙ্গা ও অন্যান্য সবজির দাম বেড়ে গেছে। এসব সবজি চৌগাছা অঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। ফলে এখানকার উৎপাদন কমে গেলে এর প্রভাব জাতীয় বাজারেও পড়বে।
শুধু কৃষক নয়, শ্রমিকদের জীবনযাপনেও প্রভাব পড়েছে। দিনমজুর মিলন হোসেন বলেন, “বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ। আয় না থাকলে আমাদের পরিবার চালানো কঠিন হয়ে যায়। উপরন্তু বাজারে সবকিছুর দামও বাড়ছে।”
চৌগাছার বেড়গোবিন্দ বাওড়পাড়ের বাসিন্দা রসুল আলী বলেন, “আমাদের এলাকায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। আর বৃষ্টি হলে আমরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হব।”
অপরদিকে, টানা বৃষ্টিতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ভিজে ভিজে স্কুল ও প্রাইভেট পড়তে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অভিভাবক জাহিদ হাসান বলেন, “স্কুল বন্ধ রাখা উচিত। আমার সন্তান প্রতিদিন ভিজে গিয়ে ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।”
চৌগাছা সরকারি মডেল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন জানান, “সরকারি নির্দেশনা ছাড়া আমরা স্কুল বন্ধ রাখতে পারি না।” প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরাও চাই স্কুল বন্ধ হোক, কিন্তু সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই।”
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আফসার উদ্দিন বলেন, “এই আবহাওয়ায় শিশুরা সহজেই ঠাণ্ডা, জ্বর ও ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। তাই তাদের নিরাপদে রাখা জরুরি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসেন বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ধানের বীজতলা ও বিভিন্ন সবজির ক্ষেত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত মশা নিধন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং জরুরি ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।







