Thursday, July 17, 2025

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত মানুষ

সামান্য কয়েকদিন আগের কথা। মধ্য গাজায় মানবিক ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারান ১৯ বছর বয়সী কাদের। তার বাবা মাহমুদ কাসিম জানান, কাদের গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবার আনতে গিয়েছিল।

কাসিম বলেন, সেই রাত ১১টার দিকে আমি ওর মা শেষবারের মতো ফোনে কাদেরের সঙ্গে কথা বলি। সে জানায়, সে নেটজারিম ত্রাণকেন্দ্রে নিরাপদে আছে। আমরা সাবধানে থাকতে বলি। এরপর রাত ১টার সময় ফোন করি, কিন্তু সাড়া মেলেনি। ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করি, তারপর হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিই। শেষ পর্যন্ত ওর মরদেহ পাই—বুলেটবিদ্ধ অবস্থায়।

তার ভাষায়, একজন ১৯ বছরের ছেলের জীবন তো সবে শুরু। সে শুধু একটি খাবারের বাক্স আনতে গিয়েছিল। আমি চাইনি, কিন্তু ছেলেটি মনে করেছিল পরিবারকে সাহায্য করা তার দায়িত্ব। সেখানে অবর্ণনীয় অবস্থা। মানুষের জীবন চলে যাচ্ছে। কেউ আমাদের নিয়ে ভাবে না—না হামাস, না ইসরায়েল, না আরব দেশগুলো।

গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষ এখন পুরোপুরি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। মে মাসের এক জরিপ অনুযায়ী, গাজার ৯৩ শতাংশ মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছেন।

যদিও জাতিসংঘ ও জিএইচএফসহ কয়েকটি সংস্থা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তবু প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল। অনেক সময় ত্রাণবোঝাই ট্রাক লুটের শিকার হচ্ছে, আবার সশস্ত্র সংঘর্ষ বা বিমান হামলায় প্রাণহানি ঘটছে।

৪৪ বছর বয়সী আবু লিবদা বলেন, আমি জানি, ত্রাণ আনতে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমাদের বাঁচতে হবে। একবার একটা ট্রাক থেকে আমি ময়দার বস্তা নিতে পেরেছিলাম। হঠাৎ দুটি বিস্ফোরণের শব্দ পাই। চোখের সামনে মানুষ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে যায়। আমি ভাগ্যক্রমে হালকা আহত হই।

গাজায় শুধু গত কয়েক সপ্তাহেই ইসরায়েলি সেনার গুলি ও গোলায় পাঁচ শতাধিক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে, হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইসরায়েলসহ কয়েকটি দেশ। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, “হামাসই বেসামরিক মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে।”

গত মঙ্গলবার অক্সফাম, সেভ দ্য চিল্ড্রেনসহ ১৩০টি এনজিও জিএইচএফকে অনুরোধ করেছে, তারা যেন ত্রাণশিবির বন্ধ করে দেয়, কারণ এসব কেন্দ্র সামরিক এলাকার খুব কাছাকাছি এবং সাধারণ মানুষ গুলির মুখে পড়ছে।

জিএইচএফ চেয়ারম্যান জনি মুর জানিয়েছেন, তারা ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ মিল খাদ্য বিতরণ করেছেন। জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চান বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ত্রাণের জন্য ভিড় সামরিক অবস্থানের কাছাকাছি চলে এলে সতর্কতা দিতে গুলি ছোড়া হয়। তবে এতে কতজন বেসামরিক লোক মারা যান, সেই সংখ্যা জানায়নি আইডিএফ।

গাজায় মানবিক সংকট প্রতিদিন গভীরতর হচ্ছে। খাদ্য, নিরাপত্তা ও ন্যায্যতার অভাবে অসহায় মানুষের জীবনে নেমে এসেছে মৃত্যুর আতঙ্ক—ত্রাণের জন্য এগিয়ে গেলেও নিশ্চিত নয় ফেরার পথ।

অনলাইন ডেস্ক/আর কে-০২

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর