Friday, December 5, 2025

একশ শয্যার হাসপাতাল পড়ে আছে অচল, চৌগাছায় চিকিৎসা ব্যাহত জনবল সংকটে

৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ছয়তলা ভবন প্রস্তুত হলেও চালু হয়নি এক বছরেও। চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুর আগেই ভবন থেকে চুরি যাচ্ছে বাথরুম ফিটিংস, অক্সিজেন প্ল্যান্টের পাইপ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটে ভুগছে পুরনো ৫০ শয্যার হাসপাতালটি, ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।

দেশসেরা হিসেবে একাধিকবার পুরস্কৃত হওয়া এই হাসপাতালটি চৌগাছা ছাড়াও ঝিকরগাছা, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরের রোগীদের ভরসার স্থল। প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ৬০০-৭০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু ৫০ শয্যার হাসপাতালেও ভর্তি থাকেন ৮০-৯০ জন রোগী, যাদের বেশিরভাগই নারী।

হাসপাতালের জন্য প্রয়োজন ৩২ জন চিকিৎসক, বাস্তবে ১৭ জন কর্মরত থাকলেও প্রেষণে আছেন মাত্র ৪ জন। অনুপস্থিত ১৩ জনের মধ্যে চারজন বছরের পর বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত—তাদের মধ্যে ৩ জনই বিদেশে রয়েছেন।

হাসপাতালের সিনিয়র সেবিকা ঝুমুর রাণী হালদার বলেন, “চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ, সুইপার—সব পদেই ঘাটতি। চারজন মিডওয়াইফারি বদলি হলেও নতুন কেউ আসেননি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য লোক নেই, রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।”

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া নতুন ভবনের কাজ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি। ভবনটি নির্মিত হয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে, যার ব্যয় ৩৮ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে মূল ছয়তলা ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও সরবরাহ লাইনে খরচ হয় ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

তবে নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরুর আগেই সেখানে শুরু হয়েছে ভাঙচুর ও চুরি। বাথরুমের ট্যাপ, ফিটিংস, অক্সিজেন লাইনের খোলা পাইপ—সবই একে একে উধাও। ভবনের বিভিন্ন অংশে চটেছে রং।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহসানুল মিজান রুমী বলেন, “১০০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পরেও কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। জনবল নেই, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন নেই, চিকিৎসক নেই।”

এ প্রসঙ্গে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, “১০০ শয্যার জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে। ওষুধ ও খাবারের বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কার্যক্রম শুরু হবে। সারা দেশে চিকিৎসক সংকট আছে। সেপ্টেম্বরে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে ৩ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিলে কিছুটা সমাধান আসবে।”

২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এক দশক চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছিল দেশসেরা। ২০১৮ সালেও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে ‘হেলথ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে।

একসময় দেশের প্রথম সারির উপজেলা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠান আজ জনবল সংকট ও অবহেলায় কার্যত ভেঙে পড়ছে। জনবলের ঘাটতি, প্রশাসনিক জটিলতা ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা—সব মিলিয়ে প্রশ্নের মুখে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত আধুনিক অবকাঠামোর ব্যবহার।

সরকারি বরাদ্দ, ভবন ও রোগী থাকা সত্ত্বেও কার্যক্রম না থাকায় চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিণত হয়েছে এক ‘অচল আধুনিকতার’ প্রতীকে। জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ, সরঞ্জাম বরাদ্দ এবং ভবন চালুর পদক্ষেপ না নিলে এই হাসপাতালের ভবিষ্যৎও রোগীদের মতোই অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর