Saturday, December 6, 2025

বৈশাখী মেলা সামনে রেখে প্রস্তুত নড়াইলের মৃৎশিল্পীরা

নড়াইল প্রতিনিধি: মাত্র একদিন পরই পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরকে বরণ করতে দেশের সর্বত্র চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আর বৈশাখী মেলা মানেই মুখোশ, রঙিন খেলনা আর মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিলের বাহার। সেই মেলায় চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নড়াইল জেলার মৃৎশিল্পীরা।

নড়াইলের লোহাগড়া, কালিয়া, মুলিয়া, রাধানগর, কুমোরডাঙ্গা, দলজিতপুর, রতডাঙ্গা, রায়গ্রামসহ শতাধিক গ্রামের পাল পাড়াগুলোতে এখন দিনরাত এক করে চলছে মাটির সামগ্রী তৈরির কাজ। কেউ তৈরি করছেন মাটির পুতুল, ঘোড়া, হাতি, পাখি, মাটির ব্যাংক, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ, আবার কেউ বানাচ্ছেন রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, কলস, ঢাকনা ইত্যাদি।

রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে লোহাগড়া উপজেলার কুন্দশী গ্রামের পালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ব্যস্ত মাটির তৈরি খেলনা ও গৃহস্থালি পণ্য প্রস্তুতে। শেষ মুহূর্তের রঙতুলির কাজ করছেন বাড়ির নারী সদস্যরা। শিশুদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে পুতুল, পাখি, পশুর মডেল ও মুখোশ। চাকা ঘুরিয়ে পণ্য বানাতে দেখা যায় কারিগর প্রভাষ পালকে। পাশে স্ত্রী লক্ষ্মীরানী পাল নিপুণ হাতে রঙতুলির আঁচড় বসাচ্ছেন।

প্রভাষ পাল বলেন, “বৈশাখ মাসে ধর্মীয় নিয়মে চাকা ঘুরানো বন্ধ রাখতে হয়, তাই এখন রাতদিন কাজ করছি। চাহিদা বেশি, সময় কম।”

তপন পাল জানান, “বছরের এই একটা উৎসব ঘিরেই আমাদের আশা-ভরসা। সারা বছর তেমন কাজ থাকে না। বৈশাখ এলেই কিছুটা বিক্রি হয়, আয় হয়। পেশাটা ধরে রাখছি শুধু ঐতিহ্যের টানে।”

অর্চনা পাল বলেন, “পহেলা বৈশাখে মেলার সময় কিছুটা বিক্রি হয়, তবে কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে এঁটেল মাটি ও রঙের দাম বেশি, কিন্তু পণ্যের দাম তেমন বাড়ানো যাচ্ছে না।”

নড়াইল শহর ও এর আশপাশে বৈশাখ উপলক্ষে যেসব মেলা বসে—তা মৃৎশিল্পীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিক্রয়মঞ্চ হয়ে ওঠে। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে ঘিরে যেমন তৈরি হয় উৎসবের আমেজ, তেমনি মেলে কিছুটা স্বস্তিও।

নড়াইল বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সোলায়মান হোসেন বলেন, “মৃৎশিল্প শুধু পেশা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। পাল সম্প্রদায়ের জীবিকা, সৃজনশীলতা আর শিল্পবোধ এই শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিসিক থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।”

বৈশাখী উৎসবকে ঘিরে বাংলার এই হাজার বছরের ঐতিহ্য যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মাটির গন্ধে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর