একসময় দরিদ্র মানুষের খাবার হিসেবে পরিচিত মিষ্টিআলু এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ফসল হয়ে উঠেছে। শেরপুরের চরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা মিষ্টিআলু রফতানি হচ্ছে জাপানে। জাপানের নারুতো জাপান কোম্পানি লিমিটেড সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ক্ষেতের ফসল কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে মিষ্টিআলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৫ হেক্টর জমি। তবে চাষ হয়েছে ২১২ হেক্টর জমিতে। জাপানে রফতানির খবর শুনে কৃষকদের মধ্যে চাষাবাদের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
এ বছর নারুতো জাপান কোম্পানি শেরপুর সদর উপজেলার বলাইয়ের চর, চরমোচারিয়া ও কামারের চরের ৪৩ জন কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এসব কৃষক ৯০ একর জমিতে কোকোই-১৪ জাতের মিষ্টিআলু চাষ করেছেন। কোম্পানিটি বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে। মাঠ থেকে আলু উত্তোলনের পর তা সরাসরি কোম্পানির পক্ষ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
গত বছর মিষ্টিআলুর দাম ছিল ৫৮০ টাকা মণ। তবে এ বছর তা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে। এতে কৃষকেরা আরও বেশি লাভের আশা করছেন।
বলাইয়ের চর ইউনিয়নের কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, একরপ্রতি আলুর ফলন হয় ২৫০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত। যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। উৎপাদন উপকরণ বিনামূল্যে পাওয়ায় পরিচর্যা ও উত্তোলন ছাড়া আর কোনো খরচ নেই।
কৃষক কমেদ আলী জানান, গত বছর তিনি এক একর জমিতে আলু চাষ করে ৪০ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন। এবার দাম বেশি হওয়ায় তিনি আরও লাভের প্রত্যাশা করছেন।
নারুতো জাপান কোম্পানির ফিল্ড অফিসার মো. জাকারিয়া জানান, রফতানি করা মিষ্টিআলু সেদ্ধ, চিপস ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যপণ্য তৈরি করে জাপান, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, শেরপুরের চরাঞ্চলের মাটি কোকোই-১৪ জাতের মিষ্টিআলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই জাতের আলু খোসাসহ খাওয়া যায় এবং এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ জাপানের বাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
মিষ্টিআলু চাষে বিনিয়োগ ও চাষাবাদের সুবিধা বাড়ায় শেরপুরের কৃষকদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। রফতানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষি অর্থনীতিতেও এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দেশীয় কৃষি থেকে বৈশ্বিক বাজার: শেরপুরের মিষ্টিআলু কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।