রংপুর, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): রংপুরসহ আশপাশের অঞ্চলে কয়েকদিন ধরে তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা এবং উত্তরের হিমেল বাতাসে আলু চাষে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, এই বৈরি আবহাওয়ার কারণে আলু ক্ষেতে ছত্রাকজনিত নাবিধসা রোগ (লেটব্লাইট) দেখা দিচ্ছে, যা উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
কাউনিয়া উপজেলার তাজিদুল ইসলাম ও পীরগাছার বুলবুল ইসলাম জানান, ঋণ নিয়ে বেশি লাভের আশায় আলু চাষ করেছেন। তবে শীত ও কুয়াশার কারণে জমিতে আলু গাছের পাতা সাদা হয়ে মরে যাচ্ছে। গংগাচড়া উপজেলার কৃষক আবদুস সোবহান বলেন, “তিস্তাচরে কয়েক একর জমিতে আলু চাষ করেছি। কিন্তু ঠান্ডা আর কুয়াশায় গাছ মরে যাচ্ছে। স্প্রে করতেও প্রচুর খরচ হচ্ছে।” একই অবস্থা জানিয়েছেন চর ইচলির কৃষক মামুন এবং গজঘণ্টা এলাকার বাবুল মিয়া।
গংগাচড়া উপজেলার কৃষি অফিসার শাহীনুর রহমান বলেন, “দিন দিন শীত ও কুয়াশার প্রকোপ বাড়ায় আলু ক্ষেতে নাবিধসা রোগ দেখা দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
রংপুর জেলায় এবার ৫৫ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, “আবহাওয়া কিছুটা বৈরি আচরণ করছে। এ ধরণের পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন চললে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কৃষকরা আগের তুলনায় অনেক সচেতন হয়ে নিজেদের চাষাবাদে যত্ন নিচ্ছেন। এছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
বর্তমানে রংপুর অঞ্চলের অনেক জমিতে আলু গাছের বয়স ৫০-৬০ দিন। ঘন কুয়াশা এবং তীব্র শীতের কারণে গাছ নুয়ে পড়ছে এবং ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোগ দমনে স্প্রে করতে গিয়ে কৃষকদের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যা তাদের আরও চাপের মুখে ফেলছে।
গত কয়েক বছরে বাজারে আলুর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাজারের মুনাফা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রংপুর অঞ্চলে চলমান বৈরি আবহাওয়া এবং ঘন কুয়াশা কৃষকদের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি বিভাগ এবং চাষিদের সমন্বিত উদ্যোগেই এ সংকট কাটানো সম্ভব।