উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল পৌরসভা ও ইউনিয়নের ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে, যেখানে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ২৭টি এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক বেশি।
সম্প্রতি কাগজপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম ছিল। অন্য শ্রেণির আসনও খালি ছিল। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, খেলার মাঠে খেলা চলছিল এবং সকল বই বিতরণ করা হয়নি, তাই উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। একই অবস্থা দেখা গেছে নারায়নপুর নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৯৪ জন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বিন মোহাম্মদ জানান, তাদের বিদ্যালয়টি একটি ছোট গ্রামে অবস্থিত, যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম এবং এখন ইসলামি কিন্ডারগার্টেনগুলোর চাপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ইসলামি স্কুলে দ্বীনি শিক্ষা ও ক্যাডেটের ব্যবস্থা থাকায় অভিভাবকেরা সেখানে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি মনে করেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আরো চিন্তা করতে হবে।
স্থানীয়রা জানান, অনেক ছাত্র-কিছু সরকারি স্কুলে ভর্তি হলেও আসলে কিন্ডারগার্টেনে পড়ে, মূলত উপবৃত্তির জন্য সরকারি স্কুলে নাম লিখিয়ে তারা সুবিধা গ্রহণ করে। তবে এসব বিষয় থেকে সবাই অস্বীকার করেছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মান নিয়ে অভিভাবকদের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও, কিছু অভিভাবকরা মনে করেন, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকভাবে পাঠদান করেন না এবং তাদের উপস্থিতিও নিয়মিত থাকে না। এ কারণে, অভিভাবকেরা শিশুদের কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন।
অন্যদিকে, বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইজ্জত আলী দাবি করেন, তাদের বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মানের ওপর কঠোর তদারকি রয়েছে এবং শিক্ষা প্রশাসন সঠিকভাবে কাজ করছে। বিদ্যালয়টি পরিষ্কার এবং সুন্দর। তার বিদ্যালয়ের ফলাফলও ভালো, তবে কেন শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে না, এমন প্রশ্নে সহকারী শিক্ষক আলাউদ্দিন জানান, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ছোট সময়সূচি এবং আকর্ষণীয় পাঠদান পদ্ধতি অভিভাবকদের বেশি আকর্ষণ করছে।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে কাগজপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৩৭ জন শিক্ষার্থী ছিল, তবে এক বছরের মধ্যে নতুন শিক্ষার্থী আসেনি। অথচ একই এলাকায় থাকা কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে গেছে। কাগজপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহানাজ পারভিন জানান, তারা শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, তবে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনে পাঠাচ্ছেন।
শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমান বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর তদারকি নিয়মিত হচ্ছে, তবে কিন্ডারগার্টেনের সাথে অঘোষিত প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। তিনি আরো বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা করা হবে।
সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে আরো মনোযোগ দিতে হবে এবং অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। সরকারি শিক্ষকদের সৃজনশীল মনোভাব পোষণ করতে হবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে।