ঢাকায় বর্তমানে সড়ক অবরোধের ঘটনা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ তাদের দাবির পক্ষে সড়ক আটকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই নিজেদেরকে বঞ্চিত বা বৈষম্যের শিকার হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। কখনও সুনির্দিষ্ট ব্যানারে, আবার কখনও ব্যানার ছাড়াই, এমনকি হঠাৎ করেই সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু হয়।
যেমন, ২৬ আগস্ট সকালে শাহবাগ এলাকায় প্যাডেলচালিত রিকশাচালকদের এক বিশাল দল সড়ক অবরোধ করেছিল। তাদের মূল দাবি ছিল, ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেওয়া হবে না। এর কিছুদিন পর, ১৯ নভেম্বর, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা হাইকোর্টের এক নির্দেশনার বিরোধিতা করে ঢাকা সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন, এবং ২১ নভেম্বর মহাখালীতে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তবে, তারা সড়ক অবরোধ করে তাদের দাবির প্রতি সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন, এবং অলিগলির সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল অনুমোদিত হয়।
এমন চলমান আন্দোলনের মধ্যে গত ১৫ আগস্ট থেকে চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনও জোরদার হয়েছে। তাদের দাবি, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হোক। যদিও এই দাবিতে আন্দোলন চলছিল একাধিক বছর ধরে, এবার তা আবার নতুন করে তীব্র হয়েছে।
সড়ক অবরোধের কারণে রাজধানী ঢাকায় যানজট আরও বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষের চলাচল আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। গত পাঁচ মাসে অন্তত ১০১টি আন্দোলনের খবর পাওয়া গেছে, অনেকগুলো এখনও চলমান। সড়ক অবরোধের সময় দাবি থাকে যেকোনো বিষয় থেকে—চাকরি স্থায়ীকরণ থেকে শুরু করে বেতন বৃদ্ধি, সেবা প্রদান বা প্রশাসনিক বৈষম্য দূরীকরণ পর্যন্ত।
এমন পরিস্থিতিতে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক ভাষণে বলেন, ‘যতটুকু সম্ভব, আমাদের কাজ করতে দিন, আপনারা যা চাচ্ছেন লিখিতভাবে আমাদের জানাতে পারেন।’ যদিও তাঁর আহ্বান সত্ত্বেও সড়ক অবরোধের ঘটনা থেমে থাকছে না। গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একদিনে ১৪-১৫টি সংগঠন একযোগে সড়কে বিক্ষোভ করেছিল, যার মধ্যে কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণ, দুর্নীতি রোধ, বৈষম্য দূরীকরণসহ নানা দাবি ছিল।
আন্দোলনের মধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি এখনও চলমান, এবং সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিভিন্ন গ্রুপ মানববন্ধন করে তাদের দাবি জানাচ্ছে। গত ২৩ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করা হয়, কিন্তু তাও আন্দোলনকারীরা মেনে নেননি এবং তাদের আন্দোলন বজায় রেখেছেন।
অপরদিকে, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঝুঁকি ভাতা এবং অন্যান্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন, এবং পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি, শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান যেমন শাহবাগ, মগবাজার, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, রামপুরা, মিরপুর, উত্তরা, সাভার, এসব জায়গায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সংঘটিত হচ্ছে। অনেক সময় এই আন্দোলনগুলোর মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিক্ষোভও চোখে পড়ে, বিশেষত কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্য নিরসন ও পদোন্নতির দাবিতে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, সড়ক অবরোধের মাধ্যমে মানুষের চলাচল ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করা উচিত নয়, এবং এমন আন্দোলনগুলোর আগে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করার চেষ্টা করা উচিত।
এছাড়া, ঢাকার শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করতে শুরু করেছে, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এমন একটি পরিস্থিতিতে, পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মকর্তা, চাকরিপ্রত্যাশী—সব ধরনের মানুষের মধ্যে আন্দোলন চলমান। কেউ বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে, কেউ বৈষম্য দূর করার জন্য, আবার কেউ চাকরির সুযোগ বা সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে।







