আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা: গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে এক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল গরুর গাড়ি। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের গ্রামাঞ্চলে কৃষি ফসল পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতের জন্য এই দু-চাকার গরুর গাড়ির কদর ছিল অপরিসীম। তবে আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়া এবং ডিজিটাল পদ্ধতির প্রভাবের কারণে, গ্রামবাংলার চিরচেনা এই ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা এখন বিলুপ্তপ্রায়।
এক সময় গ্রামাঞ্চলের মেঠোপথে নিয়মিত দেখা মিলত এই গরুর গাড়ির। কৃষকেরা ভোরবেলায় গরুর গাড়িতে করে মাঠে নিয়ে যেতেন জৈব সার, গরুর খাদ্য এবং লাঙল-মই-জোয়াল। বর-বধূকে গরুর গাড়িতে চড়িয়ে বিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ঐতিহ্য ছিল গ্রামবাংলার সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ।
গরুর গাড়ি পরিবেশবান্ধব একটি যান। এতে কোনো জ্বালানি প্রয়োজন হয় না, ফলে ধোঁয়া এবং শব্দ দূষণের ঝুঁকি থাকে না। দুর্ঘটনার হারও তুলনামূলক কম। রিকশা এবং ঠেলাগাড়ির মতো, এটি পরিবেশের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
তবে বর্তমানে যান্ত্রিক বাহনের উত্থান এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে, গরুর গাড়ির ব্যবহার কমে গেছে। ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনের মতো বাহনগুলোর সহজলভ্যতা এবং দক্ষতার কারণে গরুর গাড়ি প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। শহরের শিশুরা তো দূরের কথা, গ্রামের শিশুরাও এখন গরুর গাড়ি সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানে না।
গ্রামের প্রবীণ গাড়িয়াল জাহাঙ্গীর আলম এবং এমামুল হক জুয়েলের মতে, একসময় গরুর গাড়ি চালিয়ে তাদের পরিবার চালানো সম্ভব হতো। এখন আর কেউ গরুর গাড়ি ব্যবহার করতে চায় না। ফলে তারা অটোভ্যান বা ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখনো মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা যায়। কিন্তু এটি বিলুপ্তির পথে। পরিবেশবান্ধব এই বাহনের প্রচলন ধরে রাখতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভূপালী সরকার বলেন, নতুন প্রযুক্তির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। ধনী কৃষকদের এই বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
গরুর গাড়ি শুধু পরিবহন নয়, গ্রামবাংলার একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক। এটি টিকিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
রাতদিন সংবাদ/আর কে-০৭







