২০২৪ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৬,৯৭৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯,২৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৩,১৯০ জন। শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮,৫৪৩ জন এবং আহত হয়েছেন ১২,৬০৮ জন।
দুর্ঘটনার কারণ ও প্রভাব
মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক এবং ফিডার রোডে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, চালকদের অদক্ষতা, মাদকাসক্তি এবং সড়কের অবকাঠামোগত ত্রুটিগুলোকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ইজিবাইক। যদিও এসব যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, তবে গণমাধ্যমে এ সম্পর্কিত দুর্ঘটনার খবর তুলনামূলকভাবে কম প্রকাশিত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের পরিচয়
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, শিক্ষার্থী, নারী, শিশু এবং পরিবহন শ্রমিক। এছাড়া ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৪৮ জন সাংবাদিক এবং ১৭ জন চিকিৎসকও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
যানবাহনের ধরন ও দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার শিকার ৯,৭১৭টি যানবাহনের মধ্যে ২৭.৪৮ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল, ২৩.৩৩ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ এবং ১৬.৫৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। অন্যদিকে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং নছিমন-মাহিন্দ্রার দুর্ঘটনা আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন ও সড়ক বিশ্লেষণ
সড়ক দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫০.৮৪ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনায়, ২৪.৩৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং ১৮.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার ৩৫.৬৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২১.৬৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ৩৫.৮১ শতাংশ ফিডার রোডে সংগঠিত হয়েছে।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ
যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশকিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- সড়ক নিরাপত্তা আইন কার্যকর করা।
- সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে নিরাপত্তা উইং চালু করা।
- সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন, জেব্রা ক্রসিং এবং আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
- গণপরিবহন চালকদের প্রশিক্ষণ এবং নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।
সড়ক নিরাপত্তায় কার্যকর উদ্যোগের দাবি
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দাবি করেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কেবল আইন প্রণয়ন ও সভা-সমাবেশ যথেষ্ট নয়। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল এবং আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করা জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হকসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।







