একসময় বাংলাদেশের অন্যতম লাভজনক ব্যাংক হিসেবে গণ্য হতো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। এস আলম গ্রুপের হাতে যাওয়ার পর এই ব্যাংকটির অস্তিত্ব পড়ে যায় হুমকির মুখে। অভিযোগ ওঠে, ব্যাংকটিকে ধ্বংস করতে নেওয়া হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎকালীন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চার বছর আগে পরিকল্পনা, জড়িত তিন গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকে তৎকালীন শীর্ষ পদে থাকা এক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ইসলামী ব্যাংক এস আলমের হাতে যাওয়ার অন্তত চার বছর আগে এটি দখলের পরিকল্পনা নেওয়া হয় আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা জানান, এই কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন গভর্নর। ইসলামী ব্যাংক যাতে সহজেই এস আলম গ্রুপ দখলে নিতে পারে সে জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে করেন তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পদে থাকা এস কে সুর চৌধুরী, শুভঙ্কর সাহাসহ হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংকে জামায়াতমুক্ত করার কাজ করতেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ড. আতিউর রহমান চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে এস আলমের প্রতিনিধির সংখ্যা বেড়ে যায়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ইসলামী ব্যাংক দখলের নেপথ্যে সরাসরি ভূমিকা রাখার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাংক দখলের মহোৎসবে এস আলম গ্রুপকে উৎসাহ দেন সাবেক গভর্নর ফজলে কবির। তার আমলেই চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ অর্থ লুটে নেওয়া শুরু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই লুটপাটকে বছরের পর বছর সমর্থন করে গেছে। এমনকি এস আলমের পছন্দের লোকদেরই ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডেপুটি গভর্নরদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাদের দুয়েকজনকে উপদেষ্টা করে রেখে দেওয়া হয় এস আলমের পরামর্শেই। অর্থাৎ এস আলম-বন্দনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি ফ্লোরে চলতে থাকে বছরের পর বছর।
তিনি আরও জানান, ফজলে কবিরের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পদে থাকা হাতে গোনা দুই-একজন ছাড়া বেশিরভাগ কর্মকর্তাই এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। অবসরের পর এস আলমের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন— এই আশায়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যম সারির অনেক কর্মকর্তা এস আলম গ্রুপের সঙ্গে হাত মেলান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানায়, সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে ইসলামী ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য ব্যাংক থেকেও টাকা বের করে নেয় এস আলম গ্রুপ। এই সময়ে পুরো বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপ-নির্ভর হয়ে পড়ে। এই দুই গভর্নরের (ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ) সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কার্যালয় ও গুলশানে গভর্নরের বাসভবন ‘গভর্নর হাউস’ হয়ে ওঠে এস আলম গ্রুপের মালিক ও কর্মকর্তাদের বিচরণক্ষেত্র।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার সুবাদে টাকা ছাপিয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে অর্থপাচারে সহায়তা করেন আব্দুর রউফ তালুকদার। এস আলম গ্রুপকে সহায়তা দিতে আব্দুর রউফ তার বাছাই করা কিছু কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এস আলমের বিষেয়ে কোনও পরিদর্শন বা তদন্ত যাতে না হয় সেজন্য এই সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়। এই সিন্ডিকেটের নির্দেশেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এমনকি এই সিন্ডিকেট এস আলমের হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, এনবিআর ও আদালতকেও নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে।
-অনলাইন ডেস্ক







