Friday, May 3, 2024

যশোর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর কাছেই সরকারি ওষুধ বিক্রি

- Advertisement -

সব নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে সরকারি ওষুধ ভর্তি রোগীর কাছেই বিক্রির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় যশোর জেনারেল হাসপাতালসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, হাসপাতালের কেন্দ্রীয় স্টোরসহ প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে মূল্যবান সরকারি ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম বাইরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে দায়িত্বরতরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ। তারই অংশ হিসেবে মহিলা পেয়িং ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর কাছে সরকারি ওষুধ বিক্রিকারী কর্মচারীকে স্থায়ী বহিস্কারের একদিন পরেই ওয়ার্ড ইনচার্জকে অব্যাহতি এবং নতুন ইনচার্জ পদায়নের আদেশ জারি করা হয়েছে। একই সাথে এ ঘটনায় অচিরেই হতে পারে তদন্ত কমিটি। কর্তৃপক্ষের ধারণা, সুষ্ঠু তদন্ত হলে ফেঁসে যেতে পারে অনেক রাঘব-বোয়াল।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক ফেরদৌসী বেগম মহিলা পেয়িং ওয়ার্ডে নতুন ইনচার্জ হিসেবে সিনিয়র স্টাফ নার্স শান্তি রানী মিস্ত্রির নাম প্রস্তাব করেন। তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশীদ তাৎক্ষণিক আদেশ জারি করেন সিনিয়র স্টাফ নার্স লিসা সুলতানাকে অব্যাহিত দিয়ে শান্তি রানী মিস্ত্রিকে নতুন ইনচার্জের দায়িত্ব দেয়া হলো। আদেশ জারির ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর এবং নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, বিভিন্ন মহল থেকে জোর দাবি উঠেছে আউট সোর্সিংয়ের কর্মচারী বহিস্কার কিংবা ওয়ার্ড ইনচার্জ পরিবর্তনের আদেশ দিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে স্বচ্ছ তদন্ত করার। এতে সরকারি ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রির সাথে জড়িত রাঘব বোয়াল তথা ক্ষমতার অপব্যবহারকারীরা চিহ্নিত হবে এবং তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে।

একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ, প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হলেও রোগীদের জন্য তা সরবরাহ করা হয় না। কেন্দ্রীয় স্টোরে মজুদের আগেই তা বিক্রি হয়ে যায়। ঠিকাদারের সাথে গোপন আঁতাতে সরবরাহ না নিয়েই স্টকলেজারে এন্ট্রি দেয়া এবং বিতরণের ভুয়া নথিপত্র তৈরি করা হয়। স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে এ সংক্রান্ত অভিযোগও গিয়েছে। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালে ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য ১০ কোটি টাকার টেন্ডার হলেও কয়েক লাখ টাকার মালামাল সরবরাহ নিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন সাইফুল ইসলাম। ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। একই বছরের পহেলা নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়কে অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৬ নভেম্বর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ওই তদন্ত শেষ হলেও প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর কাছে সরকারি ওষুধ বিক্রির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় নতুন করে আলোচনায় এসেছেন স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামসহ ওয়ার্ড ইনচার্জ নার্সগণ।

হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, সরকারি ওষুধ রোগীদের দেয়ার ক্ষেত্রে যে কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্ভাগ্যজনক। ঘটনা ফাঁস হওয়ার সাথে সাথে সরাসরি জড়িত কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ওয়ার্ড ইনচার্জও পরিবর্তন করা হয়েছে। সরকারি ওষুধসহ যেকোনো সম্পদ বিক্রি ও পাচার রোধে প্রত্যেকটি বিভাগে গোয়েন্দা নজরদারীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সাথে কেন্দ্রীয় স্টোরে ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামের মজুদ, ওয়ার্ডে সরবরাহ এবং রোগীদের মাঝে বিতরণের রেকর্ডপত্র নিয়মিত পর্যালোচনা করা হবে। এতে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। একই সাথে সরকারি ওষুধ বা অন্য কোনো সামগ্রী বিক্রি করার সাহস কেউ পাবে না।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত