রাতদিন ডেস্কঃ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবার (৫ মে) সকালে দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী গ্রামের বাজার এলাকায় নিহত ফারুকের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে প্রায় ৪ হাজার মানুষ অংশ নেন। এর আগে নিহত দিনু মন্ডল ও আক্তার মন্ডলের মরদেহ নিয়েও মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
নিহত ফারুক মণ্ডল দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী গ্রামের মৃত দিনু মন্ডলের ছেলে। বৃহস্পতিবার (৪ মে) সকালে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফারুকের মরদেহ চিলমারী গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছানোর পর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দিনু ও আক্তারের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
ফারুকের বাবা দিনু মন্ডল ও প্রতিবেশী আক্তার মণ্ডল গত রোববার একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত আক্তার মণ্ডল (৪০) চিলমারী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে এবং দিনু মন্ডল (৬৫) একই গ্রামের দবির মণ্ডলের ছেলে।
এছাড়াও প্রতিপক্ষের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুর রহমান কাজীর ছেলে সাইদুল কাজী (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বিশু মণ্ডলের ছেলে ফজলু ডাক্তার ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিক্ষোভকারী নিহতের স্বজন জুলেখা বলেন, সামান্য রাস্তার জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। তার জেরে প্রতিপক্ষের শত শত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিনু, আকতার ও ফারুক মন্ডলকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তাদের নৃশংস হামলায় অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই।
নিহত দিনু মন্ডল, তার ছেলে ফারুক ও প্রতিবেশী আক্তার মন্ডলের মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাদের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তাদের মৃত্যুতে পুরো এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চিলমারীর আকাশে বাতাসে শোকের মাতম। নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা।
মানববন্ধনে নিহতের স্বজনরা বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে প্রায় ২৫ জনকে গুরুতর আহত করে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় হাসপাতালে অনেকেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারুক, আক্তার মন্ডল ও দিনু মন্ডল ঢাকায় মারা গেছেন।
নিহত আক্তারের বড় ছেলে শাহীন বলেন, সামান্য রাস্তার জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের শতাধিক লোক পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মন্ডল গ্রুপের লোকজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে এবং আগুন দেয়। খুনিদের ফাঁসি চাই।
নিহত দিনু মন্ডলের মা ও ফারুকের দাদী সালেহা খাতুন বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে তিনজনকে হত্যা করেছে। নির্মমভাবে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি চাই।
মানববন্ধনে চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, সামান্য একটা রাস্তার জন্য তিনজনকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। প্রতিপক্ষের পেট্রোল বোমার আগুনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। যে রাস্তা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। সেই রাস্তায় লাশের মিছিল হচ্ছে, লাশ নিয়ে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তাদের সমস্যা নিয়ে আমি তিনবার বৈঠক করেছি, সমাধানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু একটা পক্ষ শান্তি ও সমাধান চায়নি। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মন্ডলদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে তিনটি মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করল। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সবার শাস্তি চাই। আমি প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, চিলমারীর ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই এলাকায় কোনো ধরনের লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ দিনরাত কাজ করছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় শিকদার-খা গ্রুপ মন্ডল গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা করে। প্রতিপক্ষের জমির খা, তার বাবা জলিল খা, সিদ্দিক আলম, নূর আলম শিকদার, সজিব, সিদ্দিক খা, আবু তালেব, জসিম খা, জনি খা, হাদি, আশিকসহ শতাধিক লোকজন মন্ডল গ্রুপের লোকজনের পাঁচটি বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। আগুনে পুড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর জখম ও দগ্ধ হয়ে প্রায় ২৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থলে সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এমএইচ-০৭