Saturday, April 27, 2024

শার্শায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রণোদনা কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ: দশ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা!

- Advertisement -

যশোরের শার্শায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রণোদনা কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক প্রকল্প থেকেই প্রায় দশ লাখ টাকা আত্মসাত প্রক্রিয়া চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ ঘটনায় শার্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির উদ্দীন আহম্মদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরের শার্শা উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে দুটি পর্যায়ে ২৬০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়। এই চাষীদের প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ এককেজি বীজ, ৪০ কেজি দু’রকম রাসায়নিক সার, উপকরণ পলিথিন, বালাইনাশক, সুতালি বাবদ ২ হাজার ৪৯৫ টাকা এবং চাষ ও শ্রমিক বাবদ নগদ অর্থ ২ হাজার ৮শ’ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, প্রথম পর্যায়ে ১৩০ জনকে প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি নির্ধারিত হলেও ১১টি ইউনিয়নে দশজন করে ১১০ জনকে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু খাতা-কলমে সংখ্যাটি ১৩০ই আছে। এই ১১০ জনকে শুধুমাত্র বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। উপকরণ এবং চাষ-শ্রমিক বাবদ কোনো অর্থ প্রদান করা হয়নি।

দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৩০ জন কৃষকের মধ্যে ১১৫ জনকে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। এদেরকে সার, বীজ এবং ৪ কেজি করে পলিথিন প্রদান করা হয়েছে। প্রণোদনার কোনো ধরণের অর্থ তারা পাননি। অথচ প্রকল্প শেষ করে টাকা পরিশোধের বিল-ভাউচার জমা দিয়ে বরাদ্দ উত্তোলনের প্রক্রিয়া চলছে। এভাবে দুই ধাপে প্রায় দশ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন প্রণোদনার আওতায় থাকা কৃষক শার্শার গোকর্ণ গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, তিনি শুধু সার, বীজ আর পলিথিন সুতালি পেয়ছেন। টাকা দেয়ার কথা বলা হলেও তিনি কোনো টাকা পাননি। শার্শার কায়বা গ্রামের আব্দুর রউফও একই অভিযোগ করে বলেন, তিনি কোনো টাকা পাননি।

বিষয়টি নিয়ে গত ১৬ অক্টোবর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অ লের অতিরিক্ত পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন শার্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির উদ্দীন আহম্মদ। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, প্রণোদনার এই অর্থ শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল আত্মসাতের প্রক্রিয়া চলাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি উ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুখেন্দু কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এমওপি সার নিয়ে কৃষকদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রির অভিযোগও করেন। এর প্রেক্ষিতে ওইদিনই অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. একলাছ উদ্দিন অভিযোগ তদন্তের জন্য উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হককে পাঁচ কার্যদিবসের সময় দিয়ে একটি পত্র দেন। কিন্তু সেই তদন্ত এখনও সম্পন্ন হয়নি। এদিকে, তদন্তের নির্দেশ দেয়া দশদিন পর অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. একলাছ উদ্দিন অবসরে চলে যান। এখন অতিরিক্ত পরিচালক পদেই চলতি দায়িত্বে রয়েছেন উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক। অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত না করেই তিনি স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে শার্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির উদ্দীন আহম্মদ বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রণোদনা কার্যক্রমসহ আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ করলে তদন্তের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত পরিচালক। কিন্তু এখন পর্যন্ত অভিযোগে ব্যাপারে কেউ তার সাথে কোনো কথা বলেননি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ মন্ডল দাবি করেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রণোদনা কার্যক্রমে কোনো ধরণের অনিয়ম হয়নি। ভুয়া কাগজপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, টাকা পাওয়ার পর কৃষকদের টাকা দেয়া হবে। আর অন্য যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তাও সত্য নয়।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অ লের অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ করা হয়। তাই অনিয়মের সুযোগ নেই। ভুল বোঝাবুঝির কারণে সম্ভবত চেয়ারম্যান কবির উদ্দীন আহম্মদ ওই অভিযোগ করেছিলেন।

আলোচনার মাধ্যমে এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হওয়ার সুযোগ ছিল। তবে তদন্ত চলছে; দাপ্তরিক অনেক কাজের কারণে এখনও তদন্ত সম্পন্ন হয়নি।

রাতদিন সংবাদ/আর কে-১৮

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত