স্টাফ রিপোর্টারঃ ২৮ নভেম্বর অনুষ্টিতব্য বাঘারপাড়ার ইউপি নির্বাচনে চলছে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মহড়া। নানারকম শংকার মাঝেও ভোট যুদ্ধে অংশ নিতে ভোটাররা প্রস্তুত।
তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ শুরু হবে ২৮ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে। ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে উপজেলার ৯ ইউনিয়নে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তবে ভোটের দিনে জহুরপুর ও নারিকেলবাড়িয়া ও জামদিয়া সহিংসতা ৪ ইউপিতে সন্ত্রাস ও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগেই যে মাত্রাই সহিংসতা, তা দেখে শংকায় রয়েছে ভোটাররা। এসব ইউপিতে পথে পথে এমনকি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে ভোটের মাঠে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষের (স্বতন্ত্র প্রার্থীদের)কর্মীদেরকে এ ধরনের হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। এছাড়া বেশিরভাগ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোষ্টার ছেড়ার ঘটনা তো দৈনন্দিন ঘটনা। প্রতিটি বাজারে বাজারে চলছে হুমকি-ধমকির মহড়া – এমন অভিযোগ করছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ।
জহুরপুর ইউনিয়নে সাতজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে আসাদুজ্জামান মিন্টু, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোটরসাইকেল প্রতিকে বদর উদ্দীন মোল্যা, আনারস প্রতিকে বিএনপি নেতা আবু তালেব ও চশমা প্রতিকে কাজী মনিরুজ্জামান, ঘোড়া প্রতিকে তরুণ লীগ নেতা আলমগীর হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতিকে শেখ রকিবুল ইসলাম আরজু এবং জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতিকে রফিকুল ইসলাম। এই সাতজন প্রার্থী মাঠে থাকলেও নির্বাচনে লড়াই হবে নৌকা ও মোটরসাইকেল প্রতিকের মধ্যে। জহুরপুর ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৬শ’ ৩৫ জন।
বন্দবিলা ইউনিয়নে নয়জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে সনজীত কুমার বিশ্বাস, ওয়ার্কাস পার্টির হাতুড়ি প্রতিকে বর্তমান চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ঘোড়া প্রতিকে মাসুম রেজা খান, বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢোল প্রতিকে জিয়াউর রহমান জয়, আনারস প্রতিকে বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান তপন ও চশমা প্রতিকে আনোয়ার হোসেন ভুট্টো, মোটরসাইকেল প্রতিকে সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. কাজী কামরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতিকে আনিসুর রহমান এবং জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতিকে আবু বক্কার। তবে এর মধ্যে ঘোড়া প্রতিকের মাসুম রেজা খান নির্বাচন থেকে সরে দঁাড়িয়েছেন। এই ইউনিয়নে ৮ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে থাকলেও নৌকা, আনারস ও হঁাতুড়ি প্রতিকের প্রার্থীদের মাঝে লড়াই হবে ত্রিমুখি। ভোটার সংখ্যা রয়েছে ২৩ হাজার ৭শ’ ৮ জন।
রায়পুর ইউনিয়নে ছয়জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে বিল্লাল হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আনারস প্রতিকে মঞ্জুর রশিদ স্বপন, স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতিকে সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল হক, ও মোশারেফ হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতিকে জাহিদ হাসান এবং জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতিকে আবুল কাশেম মোল্যা। এই ছয়জন প্রার্থী মাঠে থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারেফ হোসেন ও জাকের পার্টির আবুল কাশেমের প্রচার প্রচারণা নেই। নির্বাচনে লড়াই হবে নৌকা, আনারস ও চশমা প্রতিকের মধ্যে। ভোটার সংখ্যা রয়েছে ২১ হাজার ২শ’ ১৪ জন। এ (ইউনিয়নে ইভিএম) ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
নারিকেলবাড়ি ইউনিয়নে চারজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে বাবলু কুমার সাহা, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আনারস প্রতিকে আবু তাহের আবুল সরদার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতিকে ওয়াদুদ খান এবং জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতিকে জমির উদ্দীন মোল্যা। এই চারজন প্রার্থী মাঠে থাকলেও ভোটে লড়াই হবে নৌকা ও আসারস প্রতিকের মধ্যে। ভোটার সংখ্যা রয়েছে ২০ হাজার ৭শ’ ৫৮ জন।
ধলগ্রাম ইউনিয়নে দু’জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে রবিউল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আনারস প্রতিকে আতিয়ার রহমান সরদার। পরিচয়ে তারা চাচা-ভাইপো। নির্বাচনের প্রথম থেকে দু’জনের মধ্যে লড়াই থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভাইপো নৌকা প্রতিকের রবিউল ইসলামকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন চাচা। এ ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৫ হাজার ২১ জন।
দরাজহাট ইউনিয়নে আটজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান মোটরসাইকেল প্রতিকে আয়ুব হোসেন বাবলু, আনারস প্রতিকে কৃষকলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী, ঘোড়া প্রতিকে জেলা পরিষদ সদস্য ইকবাল হোসেন, টেবিল ফ্যান প্রতিকে রফিকুল ইসলাম, চশমা প্রতিকে বিএনপি ঘরনার গোলাম মোস্তফা ফুলমিয়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতিকে মোস্তাফিজুর রহমান ও জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতিকের ওমর আলী। এ ইউনিয়নে ভোটযুদ্ধে নৌকা ও আসারস প্রতিকের মধ্যে মূল লড়াই হবে। এখানে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৫ হাজার ৪শ’ ৬০ জন।
বাসুয়াড়ি ইউনিয়নে পাঁচজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে আমিনুর সরদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আনারস প্রতিকে আবু সাঈদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতিকে জামায়াত নেতা মশিয়ার রহমান, মোটরসাইকেল প্রতিকে মিজানুর রহমান ও ঘোড়া প্রতিকে বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান। এ ইউনিয়নে ভোটযুদ্ধে নৌকা ও ঘোড়া প্রতিকের মধ্যে মূল লড়াই হবে। এখানে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৮ হাজার ২শ’ ৭৯ জন।
দোহাকুলা ইউনিয়নে চারজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে বর্তমান চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান আবু মোতালেব, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতিকে বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা অরুন কুমার অধিকারী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতিকের রুহুল কুদ্দুস ও জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতিকের নুর জালাল। এ ইউনিয়নে ভোটযুদ্ধে নৌকা ও আনারস প্রতিকের মধ্যে মূল লড়াই হবে। এখানে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৮ হাজার ৮শ’ ৯১ জন।
এছড়া, জামদিয়া ইউনিয়নে পাঁচজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতিকে আরিফুল ইসলাম তিব্বত, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতিকে বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম রেজা, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতিকে বিএনপি নেতা এফ.এম. আসলাম হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংদেশের হাতপাখা প্রতিকের খাইরুল ইসলাম মিঠু ও ওয়াকার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতিকে মোস্তাফিজুর রহমান লাল। এ ইউনিয়নে ভোটযুদ্ধে নৌকা ও আনারস প্রতিকের মধ্যে মূল লড়াই হবে। এখানে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৮ হাজার ৯শ’ ৭৫ জন।
সূত্র মতে বিশেষ করে জহুরপুর, রায়পুর, নারিকেলবাড়িয়া ও দোহাকুলা ইউপিতে ভোটারদের মাঝে শঙ্কা বিরাজ করছে। তবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। সেই সাথে ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে সে বিষয়েও কাজ করছে পুলিশ। বাঘারপাড়া থানার ওসি ফিরোজ উদ্দীন জানিয়েছেন, নির্বাচনী আইন অমান্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে থানা পুলিশ।
সব ইউনিয়নে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পুলিশ সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো জানান, ভোটারদের বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভোটাররা নির্বিঘ্নেই ভোট কেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
- Advertisement -