Friday, May 10, 2024

যশোরের মেয়ে অন্তরা সরকার মিতুর সফলতার গল্প

- Advertisement -

আফজাল হোসেন চাঁদ : ১৯৯২ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বরে যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অন্তরা সরকার মিতু। সে ঐ গ্রামের জুয়েলারি ও চাউল ব্যবসায়ী অরুণ সরকার ও যশোর সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শান্তি সরকারের মেয়ে। বাবা-মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে মিতু বড়। ১৮বছর বয়সী ছোট একটা প্রতিবন্ধী ভাই আছে। অন্তরা সরকার মিতু ২০০৭ সালে যশোর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। নিজের ইচ্ছা ছিলো সে একজন ভালো ডাক্তার হবে। তবে বাবার ইচ্ছায় তার আর ডাক্তার হওয়া হলো না। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হন।২০১১সালে ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে সাতক্ষীরা মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ জুনিয়র ইন্সট্রাকটর হিসেবে প্রথম জীবনের চাকরি শুরু করেন। ২০১৪সালে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পান। চাকরির পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন। অষ্টোক্যাড ড্রইং বা বিল্ডিং এর নকশা করা সাইটে বিল্ডিং নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করা। এষ্টিমেট করা এসব দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি লেখাপড়া চলতে থাকে এবং ২০১৫সালে বিএসসি’র ৩য় বর্ষে পড়াশোনার এক পর্যায়ে নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার ঘোষপাড়া গ্রামে নিরঞ্জন ঘোষের বড় ছেলে বিএসসি ইন ইলেকট্রক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিপুণ ঘোষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন তার স্বামী ঢাকার নাভানা সিএনজি লিমিটেডের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ের পর সে চাকরি ছেড়ে শুধুমাত্র লেখাপড়া চালিয়ে যায়। তারপর স্বামীর অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে নিজের একটা পরিচয় সৃষ্টি ও সম্মান বৃদ্ধি করতে সরকারি চাকরির আবেদন দিতে শুরু করে। প্রথমে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি নিয়োগের বিপরীতে আবেদন করেন। যথাসময়ে ১শত মার্কের রিটেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কার্ড আসে। রিটেন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে অংশগ্রহণ করে ফলাফলে দেখলেন তিনি টিকে গেছেন। রিটেনের পর ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ভাইভা দেওয়া কয়েকদিন পর তার চাকরি হয়ে যায় এবং পোষ্টিং দেওয়া হয় নড়াইল জেলায়। ২০১৭সালের নভেম্বরে নড়াইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগদান করেন। চাকরির পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় যেতে হয় ক্লাসের জন্য আর রবিবার সকালে নড়াইলে এসে অফিস করতে হয় এবং তার সাথে আছে সংসার। পরবর্তীতে ঢাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডে বদলী সূত্রে চলে যান এবং বর্তমানের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চাকরিটি হয়ে যায়। তখন সবাই চেয়েছিলো যেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাকরিটা যেন না ছাড়ে কারণ ওখানে ইনকাম ভালো ছিলো তবে তার স্বামী বারবারই চেয়েছে সৎ ভাবে বেঁচে থাকতে। সে যখন শুনলো জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্ব উপজেলার প্রধান হিসেবে ও মানুষকে নিরাপদ পানি পান করিয়ে সেবা করার সুযোগ পাবেন তখন অন্যকিছু চিন্তা না করে মানুষে কথা ভেবে সৎ ভাবে জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাকরি ছেড়ে ও ১মাসের বেতন জমা দিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চাকরিতে যোগদান করেন। তারপর দায়িত্ব পরে ২০১৮সালের ৩সেপ্টম্বর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলাতে। অবশেষে চাকরির সূত্রে ঢাকা থেকে চলে আসতে হয় ঝিকরগাছাতে। বর্তমানে সে বাবার বাড়ি যশোর থেকে এসে প্রতিদিন অফিস করেন। তার চাকরির সুবিধাতে তার স্বামী ঢাকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে যশোরের চাঁচড়াতে একটি ব্যবসা শুরু করেছেন। বর্তমানে তারা দুজনে ঝিকরগাছাতে বসবাস করছেন। চাকরির শুরু হতে ঝিকরগাছাবাসীর জন্য নিরাপদ পানি খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সবাই তাকে বলতো টাকা ছাড়া সরকারি চাকরি হয়না। কিন্তু তার বিশ্বাস ছিলো সে যদি চাকরি পাই তাহলে টাকা ছাড়াই পাবো। সেটাই হয়েছে তার জীবনে।পরপর দুটো সরকারি চাকরি টাকা এবং কোনো রকম যোগাযোগ ছাড়াই হয়েছিলো। এখন তিনি যেন ঈশ্বরের কৃপায় সৎ ভাবে জীবন যাপন করতে পারেন এবং সেই সাথে সবার নিকট থেকে দোয়া ও আর্শিবাদ চেয়েছেন।

 

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত