Sunday, May 5, 2024

এসএসসি পাশ না করা দুধ বিক্রেতা জসিম এখন চৌগাছা ছাত্রদলের আহবায়ক, সমালোচনার ঝড়

- Advertisement -

চৌগাছায় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মানা হয়নি। নিয়মিত ছাত্র, অবিবাহিত এবং ক্লিন ইমেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি চৌগাছার তিনটি কমিটির ক্ষেত্রে। তিনটি আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন অছাত্র, চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ীরা। রয়েছেন বিবাহিতরাও। এ কারণে ইতিমধ্যে দু’ কমিটির ১৮ জন নেতা ডাকযোগে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের কাছে। যদিও জেলা ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঠেলাঠেলির কারণে এমন অভিযোগ উঠেছে। তাদের কারো কারোর পছন্দের লোকজন কমিটিতে আসতে না পারার কারণে ওইপক্ষের নেতারা পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি জেলা ছাত্রদলের নেতাদের। ছাত্রদলের কমিটি নড়বড়ে হলে আগামীতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। এমনটিই মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।যশোরের চৌগাছায় ছাত্রদলের তিনটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, থানা, পৌর ও কলেজ কমিটি। উপজেলা কমিটিতে ২১ জন রয়েছেন। আর পৌর কমিটিতে ১২ এবং কলেজ ছাত্রদলে পাঁচজনকে রাখা হয়েছে। উপজেলা কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে জসিম উদ্দিনকে। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে আল আমিন ইসলাম তুহিন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এনামুল কবির, জাকির হাসান, জাহিদ হাসান ও ইমরান হোসেনকে। সদস্য সচিব হয়েছেন ইমন হাসান রকি। ছাত্রদলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা রয়েছে, ২০০৫ সালের আগে এসএসসি পাস করেছেন এমন কাউকেউ কমিটিতে আনা যাবে না। অথচ আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন চৌগাছা কামিল স্নাতকোত্তর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা দেননি। এমন প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল লতিফ। কেবল তাই না, সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চৌগাছা ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বর পদে ভ্যান প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন তিনি। বর্তমানে দুধ বিক্রেতা। ছাত্রদলের উপজেলা আহ্বায়কের মতো একটি পদে এসএসসি পাস না করা একজন লোক কীভাবে অনার্স-মাস্টার্সে পড়া ছাত্রদের নেতৃত্ব দিবেন-এই প্রশ্ন বিএনপি এবং ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীর। যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হাসান একটি এনজিওতে কর্মরত বলে জানিয়েছেন কয়েকটি সূত্র। আলী রেজা রাজু বিবাহিত। উপজেলা ছাত্রদলের কমিটিতে তার নাম রয়েছে। খালেদুর রহমানও বিবাহিত বলে সূত্র জানিয়েছে। ১২ সদস্য বিশিষ্ট পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে মাজিদুল ইসলামকে। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শয়ন, হাকিম রেজা, এখলাসুর রহমান বাপ্পি, আলিফ রহমান, শোয়াইব আক্তার ও ইমরান হোসেন শাকিল। সদস্য সচিব করা হয়েছে মেহেরান হোসেন জিতুকে। পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শোয়াইব আক্তার বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করেন। আছেন ঝিনাইদহ শাখায়। পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মেহেরান হোসেন জিতু চৌগাছা বাজারের একটি পোল্ট্রির দোকানের কর্মচারী ছিলেন। নামকাওয়াস্তে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব হওয়ার পর থেকে আর পোল্ট্রির দোকানে যাচ্ছেন না বলে সূত্র জানিয়েছে। পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এখলাসুর রহমান বাপ্পির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মকবুল হোসেনের হত্যাকারীদের সাথে মিশে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেন। তার বিরুদ্ধে গত ১৯ মার্চ চৌগাছা থানায় মামলা হয়।অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রদলের খুলনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মিজানুর রহমান সজীবের উপস্থিতিতে জেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ এই তিন কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। প্রকৃত ছাত্রদের কমিটিতে স্থান না দেওয়ায় ইতিমধ্যে পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক, চারজন যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১২ জন এবং উপজেলা ছাত্রদলের চার যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১২ জন পদত্যাগ করেছেন। আরও কয়েকজন পদত্যাগের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।এদিকে, জেলা ছাত্রদলের একটি সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম ও সদস্য সচিব ইউনুস আলীর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ইউনুস আলী সমর্থিতরা বেশি পদ পাওয়ায় নাকি জহুরল ইসলাম সমর্থিতরা নাখোশ হয়েছেন। এ কারণে জহুরুল ইসলাম সমর্থিতরা পদত্যাগ করছেন।এদিকে, তিনটি কমিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে অধীনস্থ সকল ইউনিট গঠন করে জেলা ছাত্রদলের কাছে জমা দিতে হবে। যদিও ওই পত্রে কোনো তারিখ নেই। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কোন তারিখ থেকে ৬০ দিন? তারিখ নিয়েও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপারে জানতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খুলনা বিভাগীয় টিমের প্রধান মিজানুর রহমান সজীবের কাছে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পী বলেন, সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাই করে ছাত্রদলে পদ দেওয়া হয়েছে। জেলা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাই করেছেন। কেউ তো আর জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে পদে আসেনি! স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা থাকায় একপক্ষ আরেক পক্ষের সমর্থকদের মানতে পারছেন না। শুনেছি কেউ কেউ ডাকযোগে নাকি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। সেগুলো জেলা ছাত্রদল এখনো পায়নি। তবে, এরইমধ্যে কয়েকজন তাদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যারা না বুঝে পদত্যাগ করেছিলেন।

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত