Friday, December 5, 2025

অভয়নগরে অপহৃত এনজিও কর্মকর্তা উদ্ধার : নারীসহ আটক ৬

যশোরের অভয়নগরে ইকবাল জাহিদ (৪০) নামে এক এনজিও কর্মকর্তাকে অপহরণের ১১ ঘণ্টা পর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত এক নারীসহ ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভয়নগর থানায় মামলা হয়েছে।ইকবাল জাহিদ উপজেলার একতারপুর গ্রামের পীর মোহাম্মদ খাঁনের ছেলে। তিনি যশোরের আল আরাফা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি অভয়নগর উপজেলা শাখার মাঠ কর্মকর্তা। আটকরা হলেন যশোরের কাঁঠালতলা রায়পাড়ার এম এম শামসুর রহমানের ছেলে বহু মামলার আসামি এম এম রুবেল হাসান বাবু (৩৩), অভয়নগরের গুয়াখোলা প্রফেসর পাড়ার মৃত মানিক মোল্লার ছেলে আকাশ মোল্লা (২৪), বুইকারা গ্রামের মালেকের চাতাল সংলগ্ন মুজিবর হাওলাদারের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৫), পাঁচকবর এলাকার মৃত গণি সরদারের ছেলে আব্দুল মালেক (৩২) শুভরাড়া ইউনিয়নের ইছামতী গ্রামের মাজেদ খানের ছেলে ইমরুল খান (২৮) ও একই গ্রামের জাহিদ খানের মেয়ে কনা বেগম (২৫)। এ ঘটনায় যুক্ত পলাতকরা হলেন অভয়নগরের সরখোলা গ্রামের এফ এম সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে বহু হত্যা মামলার আসামি শাকিল (৩২), আকাশ (২৫) ও সোহেল (২৮)।এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইকবাল জাহিদ রোববার সকালে উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের ইছামতী গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় ঋণ প্রদান কাজে জাহিদ খানের মেয়ে কনা বেগমের বাড়িতে যান। ঋণ প্রদানে জটিলতা দেখা দিলে কনা বেগমের ভাই ইমরুল খান স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে ইকবাল জাহিদকে আটকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা অভয়নগরের তালিকাভুক্ত বহু মামলার আসামি এম এম রুবেল হাসান বাবুর কাছে দিতে বলা হয়। টাকা পরিশোধ না করলে ইকবালকে হত্যারও হুমকি দেয়া হয়।ইকবাল তার প্রতিষ্ঠানের জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এরশাদুলকে বিষয়টি অবহিত করলে বিকেলে রুবেলের কাছে এরশাদুল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পৌঁছে দেন। কিন্তু অপহরণকারীরা আরও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় ওইদিন সন্ধ্যায় ইকবালকে একটি সাদা রঙের হাইএস মাইক্রোযোগে ইছামতী গ্রাম থেকে নওয়াপাড়া বাজারের সোহাগ কাউন্টারে অপহরণ করে নিয়ে আসে। ওই কাউন্টারের ভিতরে নিয়ে টাকা পরিশোধে চাপ দিতে থাকে এবং মারপিট শুরু করে। পরে রাত ৯টার দিকে তাকে উপজেলার পাঁচকবর এলাকায় মৃত গণি সরদারের ছেলে আব্দুল মালেকের বাড়িতে নিয়ে আটকে রেখে বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্যে ইকবালের স্ত্রী সালমাকে ফোন করে অপহরণকারীরা।এদিকে, টাকা দিতে দেরি হওয়ায় ইকবালের ওপর শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। এর এক পর্যায়ে ইকবাল অচেতন হয়ে পড়েন। এসময় অপহরণকারীরা আহত ইকবালকে ওই মাইক্রোবাসে করে যশোরের কাঁঠালতলা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে আদায়কৃত এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দশ অপহরণকারী নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে ইকবালকে নিয়ে অভয়নগরের সরখোলা গ্রামে ফিরে আসে। সেখানে সিদ্দিকের ছেলে শাকিলের নেতৃত্বে বিলের মধ্যে একটি গাছের সাথে ইকবালকে বেঁধে রাখে এবং অপহরণকারীরা বাকি টাকার জন্যে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সালমাকে আসতে বলে।এদিকে, ইকবালের স্ত্রী সালমাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিষয়টি অভয়নগর থানার ওসি তাজুল ইসলামকে অবহিত করলে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। বাকি টাকা পৌঁছে দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইকবালের স্ত্রীর সাথে সাদা পোষাকে পুলিশ অবস্থান করে। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে অপহরণকারী দলের এক সদস্য রবিউল ইসলাম মুক্তিপণের টাকা নিতে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক অপহৃত ইকবাল জাহিদকে সরখোলা বিলের মধ্য থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় অপহরণকারী দলের হোতা রুবেলকে আটক করলেও শাকিল পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কনা বেগমসহ আরও চারজনকে আটক করে।এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে নয়জনের নাম উল্লেখ করে ইকবাল জাহিদ একটি মামলা দায়ের করেন।এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, প্রায় ১১ ঘণ্টার অভিযান শেষে এক নারীসহ ছয় অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মুক্তিপণের ১৫ হাজার টাকা, একটি চাকু ও অপহৃত এনজিও কর্মকর্তা ইকবালের মোটরসাইকেল। অন্য আসামিদের আটকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।

রাতদিন নিউজঃ

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর