বিশেষ প্রতিনিধিঃযশোরের বাঘার পাড়ায় ভোর না হতেই কুয়াশার ধূম্রজাল। আলস্যের চাদর অবমুক্ত করে সূর্য পুব আকাশে নিজেকে জানান দেয়ার কাজে ব্যস্ত। ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো কোমল সূর্যরশ্মিতে মুক্তোদানার মতো ঝলমল করে। কী স্নিগ্ধময়! এ যেন শীতের সকাল! বাস্তবেই এ হেমন্তে এমন আবহ দেখা যাচ্ছে। শরৎ শেষ হতেই প্রকৃতির চেহারায় পরিবর্তন ঘটেছে কিছুটা। প্রকৃতি, মাঠ-ঘাট কিংবা জীবনযাত্রা-সবখানেই হেমন্তের ছোয়া। যেন ঋতুর পালাক্রমের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কার্তিকের হাত ধরে চলে এলো নবান্নের ঋতু হেমন্ত।
নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েকদিনের অঝোর বৃষ্টি উস্কে দিলো প্রকৃতিকে। জানান দিলো শীত আসছে! এ সবমিলিয়ে সূর্যের গমন ও আগমনের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তনই শীতের আগমনী জানান।ক্লান্ত দুপুরে সোনাঝরা রোদের পাশাপাশি সকাল-সন্ধ্যায় ঘাসের কচি ডগায় জমা শিশির ফোটা, হিম হাওয়া ও কুয়াশার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে শীতের আবহ।এটি শুধু বাঘারপাড়া নয়,সারা বাংলার প্রকৃতির দৃশ্য এমনই।বাঘারপাড়ার প্রতিটি মাঠে চোখ মেললেই দেখা যায় ঘাস ও ধানের কচি ডগায় জমছে শিশির বিন্দু। সেইসঙ্গে অনুভুত হচ্ছে হিম হাওয়া। যেন হেমন্ত তার প্রকৃতির সবটুকু উজাড় করে বিলিয়ে দিচ্ছে।লেখক ও কবি কাজল মাহমুদের মতে, এটা ঠিক ঋতুবৈচিত্রের অনিবার্য প্রভাবে বাংলায় শীত আসবেই। তবে বাঙালির জীবনে শীতের আগমন অবিমিশ্র অনুভূতি নিয়ে আসে। ঠিক বসন্ত বা শরতের মতো আমরা
তাকে আবাহন করি না। শীতে বাংলা রূপ বদলায় নিজস্ব রীতিতে। হেমবরণী হেমন্ত হিমেল হাওয়ায় উপস্থাপন করে শীতের নাচন।হেমন্ত এলেই কুয়াশা নামের প্রাকৃতিক চাদরে ঢাকা পড়ে চরাচর। বাজারে নতুন শাকসবজি, সাতসকালে খেজুর রস, গৃহিণীর ডালের বড়ি দেয়ার তোড়জোড় কিংবা রাস্তার ধারে পিঠা বিক্রি। এ সবকিছুই শীতকালকে উপস্থাপন করে।শীতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার আবহমান সাংস্কৃতিক চর্চাও। শীত মানেই যেন উৎসব! কবিগান, জারিগান, পুতুলনাচ, সার্কাস, যাত্রাপালা, নাট্যমেলা আরো কত কি! সবগুলোরই আসর যেন পূর্ণতা পায় শীতের রাতে। মাঘীপূর্ণিমার উল্লাসও তো হিম সমীরণ থেকে বেরিয়ে আসা অনবদ্য নিসর্গের চিত্রপট। এতসব রূপকল্পের মাঝেও শিশির বিন্দুর নিঃশব্দ পতনের মতো প্রত্যাশা, পৌষমাস কারো যেন সর্বনাশ না হয়!তবে এ বছর শীতে রয়েছে আতঙ্ক-আশঙ্কা। কারণ চলতি সময়ে মহামারি কিছুটা স্বস্তিতে রাখলেও, শীতে বিস্তার ঘটতে পারে। সেই ইঙ্গিত থেকেই সবার প্রত্যাশা শীত যেন ম্লান না করে শীতের বৈচিত্রতা।
রাতদিন নিউজঃ







