হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যশোরের রাজনীতি। বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির দাবি, হামলার পেছনে আওয়ামী লীগের ‘ইন্দন’ রয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের দাবি বিএনপি এটা ‘নাটক’ সাজিয়েছে।
এদিকে, যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়া বাজারে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ঘিরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদের প্রাইভেটকারসহ বেশ কিছু গাড়ি ও
মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। দুই পক্ষের অন্তত ১০-১৫জন আহত হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে নানা অভিযোগ তুলে দুই পক্ষই বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে। হয়েছে সাংবাদিক সম্মেলনও। এছাড়া একে অপরের উপর ছুড়ে দেয়া হয়েছে কঠোর আল্টিমেটাম।
এসব বিষয় নিয়ে যশোরের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রত্যন্ত এলাকায়। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে
রাখতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, সহিংসতার সাথে যেই জড়াবে তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
শুক্রবার গভীর রাতে যশোরে বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ এনে শনিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। এরআগে গভীর রাতেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ফেসবুক লাইভে এসে একই অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নে কর্মী সমাবেশে হামলা চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান রাজু বলে উল্লেখ করে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা দাবি করেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এ হামলা করা হয়েছে। তাদের দাবি,
শুক্রবার রাত দুটো থেকে তিনটার মধ্যে অজ্ঞাত পরিচয়ের ২০-২৫ জন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারযোগে প্রথমে খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাড়িতে হামলা চালায়। এরপর পর্যায়ক্রমে উপশহরে সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সদস্য মিজানুর রহমান খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ সময় তারা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও ইটপাটকেল ছুঁড়ে ঘরের জানালার গ্লাস ভাংচুর করে। তাদের ছোঁড়া ইটের টুকরা ঘরের ভেতরে চলে যায়। এ সময় তাদের পরিবারের সদস্যরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। মিজানুর রহমান খানের একটি প্রাইভেটকার ভাংচুর করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এসময় আওয়ামী লীগের প্রতি হুসিয়ারি দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপি আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট এ এস এম জাফর সাদিক, মিজানুর রহমান খান, আব্দুস সালাম আজাদ, মারুফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁদসহ অনেকে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা বিএনপির সাজানো নাটক। প্রতিবছর আগস্ট আসলে এ ধরনের নাটক তারা সাজিয়ে থাকে। এবারো তাই হয়েছে। তিনি বিএনপির নাটকের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
এদিকে, শনিবার যশোর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেেেছ জেলা যুবলীগ। সভায় বক্তারা বিএনপির নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ যশোরকে কোন প্রকার অশান্তি সৃষ্টি করা হলে তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে বলে হুসিয়ারি দেন। বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান। সভায় বক্তৃতা করেন সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক হাফিজুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলন, পৌর কাউন্সিলর রাজিবুল আলম, সাহিদুর রহমান রিপন প্রমুখ।
এদিকে, যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে রূপদিয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সকাল দশটায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের হাতে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেটকার ও নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদের গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। আতঙ্কে রূপদিয়া বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষথেকে সংবাদ সম্মেলনের তিনঘন্টা পর নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ দাবি করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের উপস্থিতিতে তার গাড়িতে এবং নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদে হামলা চালানো হয়েছে। এসময় দু’টি গাড়িতে এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। এতে অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছে।
এসময় সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, অনিন্দ্য ইসলাম আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। সে আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। যা তারা ক্ষমতায় আসলে করবে।
এদিকে, বিকেলে বিএনপির শীর্ষ নেতার বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে করে সদর উপজেলা ও নগর বিএনপি। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী কালো হাত দেশে একের পর এক বিএনপি নেতা কর্মীদেরকে আঘাত করছে। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দিবাগত রাতের আঁধারে দলের জেষ্ঠ্য নেতাকর্মীদের বাসভবনে সন্ত্রাসীরা তান্ডব চালিয়েছে। আর যদি এই ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে সাধারন জনগণকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দেয়া হবে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন নেতৃবৃন্দ।
নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাসুমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান মুকুল, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকনসহ আরো অনেকে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার যশোর শহরে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। যশোরের দড়াটানা, চৌরাস্তা, মণিহার, নিউমার্কেটসহ উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন বলেন, যশোরের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেক্ষেত্রে শহরে নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সহিংসতার সাথে যেই জড়িত হোক না কেন কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
অনলাইন ডেস্ক







