Friday, December 5, 2025

শার্শা টু কাশিপুর সড়ক যেন মরন ফাঁদ 

জসিম উদ্দিন,শার্শা : যশোরের শার্শা উপজেলার শার্শা কামারবাড়ি মোড় হতে কাশিপুর বাজার সড়কটি বর্তমানে বেহাল দশা। ছোট-বড় গর্তসহ ইটের সিলিং এর কারণে দুর্ভোগের অন্ত নেই। বিগত কয়েক বছর ধরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলেও দ্রুত ব্যবস্থার কোন উদ্যেগ নেই কারোরই। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও এই সড়কে চলাচলকারী কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। সড়কটির অবস্থা এতটাই নাজুক যে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় সড়কের যাত্রীদের। বর্তমানে সড়কটি মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হয়েছে।

সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, শার্শা উপজেলার সঙ্গে নিজামপুর, ডিহি, লক্ষনপুর ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি।

এই সড়কটি দিয়ে একটি সরকারী কলেজসহ দুইটি কলেজ ও বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী , চাকরিজীবী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ চলাচল করে।

দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার না করায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছিলো অনেক আগেই। এরপর সড়কটির খানাখন্দ গুলো নির্মাণ করা হয় পিচের উপর ইটের সিলিং করে যাতে আরো বেড়ে যায় দূর্ঘটনার সংখ্যা।

ইটের সলিং গুলোও এখন নষ্টের পথে, ফলে চরম বিপদ ও ভোগান্তির যেন শেষ নাই। হালকা বৃষ্টিতে পন্যবাহী ছোট বড় যানবাহন খাদে আটকিয়ে দীর্ঘ সময় তীব্র যান জটের সৃষ্টি হচ্ছে।  বিপাকে পড়ছেন বিভিন্ন স্থানে কাজে কর্মে যাওয়া সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী এবং উপজেলা ও জেলা শহরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা।

প্রতিনিয়ত ছোট বড় দূর্ঘটনায় পড়ে বিকল হচ্ছে ছোট বড় যানবাহন গুলো। রাস্তায় ঐ সকল খানা-খন্দ গর্তের পানি এবং কাঁদা ছিটকে পথচারি, শিক্ষার্থী ও দোকানে বসা জনসাধারণকে নাস্তা-নাবুধের শিকার হতে হচ্ছে।

সেই সাথে মোটরসাইকেল, মোটরভ্যান, ইজিবাইক, এবং থ্রি-ইউলার খাদে উল্টে ও কাঁদায় স্লিপ কেটে বড় দূর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। দীর্ঘদিন ধরে এমন বেহাল সড়ক পরিলক্ষিত হলেও সংস্কারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন উদ্দ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, শার্শা-কাশিপুর সড়কের সরূপদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে কবরস্থানের পাশে, গোড়পাড়া কুমার বাড়ি ছাড়িয়ে, গোড়পাড়া উত্তরপাড়া বনমান্দার মোড় সাইনদ্দির বাড়ি, গোড়পাড়া মোল্ল্যা বাড়ি মসজিদ, তেবাড়িয়া ইউনুচের বাড়ি, দুদু মিয়ার রাইচ মিল, সরকারি বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ গেট, শাড়াতলা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পাকা রাস্তা বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ।

শাড়াতলা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তায় প্রায় ভারী যানবাহনে দূর্ঘটনার কারণে আটকে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। পানি কাঁদা ছিটকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মানুষের গায়ে লেগে চরম ক্ষতি সাধন করছে।

সরকারি বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ডিগ্রি কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, শাড়াতলা থেকে নিজামপুর আসতে যেখানে সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের রাস্তা সেখানে রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। আবার কলেজে যেতে রাস্তার অবস্থা খারাপ জানিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে গাড়ি চালকরা।

আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের উন্নয়ন হলেও শার্শার উত্তরের এই সড়কটি গত কয়েক বছরে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। যা খুবই লজ্জাজনক বিষয়। এই সড়কের কারণে উপজেলার উত্তর শার্শার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ দীর্ঘ কয়েক বছর চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

পথচারী সোনিয়া খাতুন বলেন, এই সড়কটি দিয়ে কোনো গর্ভবর্তী প্রসূতি মা কখনোই স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারেন না। অসুস্থ রোগীরা দূরের হাসপাতালে যেতে যেতেই মৃত্যুর মুখে পড়ছে। এই সড়কটি দ্রুত সংস্কার খুবই প্রয়োজন। নাহলে প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা দূর্ঘটনার সাথে মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হতে থাকবে।

সড়কটি সংস্কার ও এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী এম এম মামুন হাসান বলেন, এই সড়কটি শার্শা হতে গোড়পাড়া এবং গোড়পাড়া হতে ব্যাংদাহ সহ গোড়পাড়া হতে বেনাপোল পর্যন্ত মোট তিনটি সড়ক ওয়াল্ড ব্যাংক এর অর্থায়নে উইকেয়ার প্রকল্পের ডিপি অর্ন্তভূক্ত আছে। ড্রইং ডিজাইনের কাজ চলছে। সেটি সম্পর্ণ হলে খুব শীঘ্রই টেন্ডার হবে এবং তার পরেই এর কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, সড়টি খুবই উন্নত ও প্রশস্তকরণ করে তৈরি হবে। যার ফলে এই সড়ক দিয়ে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর সহ বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের পথ সুগম হবে। পাশাপাশি দূর্ভোগ থেকে মুক্তি ও এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে মনে করছি।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর