যশোরের শার্শার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’ অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের শেষ মুহূর্তের একটি গোল ঠেকাতে গিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের বুটের আঘাতে পা’য়ে মারাত্মক আঘাত পাওয়া গোলকিপার বনি চিকিৎসা বিনে বিছানায় ছটফট করছে।
সানোয়ার হোসেন বনি (১৭)। যশোর মোহামেডান ফুটবল দলের গোলকিপার। পাশাপাশি বিভিন্ন টুর্নামেন্টে বেনাপোল নুর ইসলাম ফুটবল একাডেমি ও নিজ উপজেলার হয়ে খেলেন তিনি।
গোলকিপার বনি যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পৌরসভার ভবেরবেড় গ্রামের মৃত চান্দু মিয়ার ছেলে।ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট বনি।বেনাপোল নুর ইসলাম ফুটবল একাডেমির ও একজন দাপুটে ফুটবলার। তুখোড় গোলকিপার বনি এখন নিজ ঘরের আলমারিতে সাজিয়ে রাখা মেডেল,ক্রেস্ট ও ট্রফিগুলোর দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আবার কবে মাঠে ফিরবে কল্পনাতেই সেই স্বপ্নোই দেখতে থাকে।গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’ অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইনালে ওঠে যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পৌর ফুটবল একাদশ।প্রতিপক্ষ উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়ন ফুটবল একাদশ।ওই ম্যাচে খেলতে গিয়ে গোল মুখের একটি বল ঠেকানোর সময় হঠাৎ পা’য়ে মারাত্মক আঘাত পায় সে। সেই থেকে বিছানায় পড়ে আছে বনি। টাকার অভাবে অপারেশন করাতে না পারায় যশোর জেলার কৃতি এই গোলকিপার এখন পায়ের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে নিজ বাড়িতে।এমন বিপদে পাশে পায়নি কোনো ক্রীড়া সংগঠনকেও।
বনি বলেন,যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন গোলাম ফারুক আমার চিকিৎসা করছিলেন।এমআইআর করার পর তিনি
উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে বলেছেন। এই পর্যন্ত চিকিৎসা করাতেই আমাদের সহায়-সম্বল সব বিক্রি করতে হয়েছে। আজ আমার চিকিৎসা করাতে নিঃস্ব হয়ে গেছে পরিবার। ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করালে আমি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। কিন্ত সে ক্ষমতা আমার পরিবারের নেই।কৃতি এই ফুটবলারের মায়ের আশা তার ছেলে সুস্থ হয়ে আবারও মাঠে গিয়ে খেলবে। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না শুধু অর্থের অভাবে। দেশের সামর্থবানদের কাছে বনির চিকিৎসা খরচের জন্য তার মা মঞ্জুয়ারা বেগম সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।বনির মা মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে এর আগে অনেক খেলায় ট্রফি জিতে সুনাম বয়ে এনেছে।তার জন্য অনেকেই গর্ব করত।বাড়িতে খোঁজ নিতো।অথচ তার এই বিপদের দিনে সমাজের কেউ এগিয়ে আসেনি।সরকার,সমাজের বিত্তবান ও যারা ফুটবলকে ভালোবাসে তারা এগিয়ে আসলেই কেবল আমার সন্তানের মুখে হাসি ফুটবে। তাই সবার কাছে আমি সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি। বিছানায় শয্যাশায়ী বনি বলেন,দিন দিন পায়ের অবস্থার অবনতি হচ্ছে।এই অবস্থা আর কিছু দিন থাকলে আমার সব আশা ভরসা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন অর্থ কষ্ট বুঝিনি।আজ বাবা নেই, তাই চিকিৎসা খরচও জোগাতে পারছি না।আমি সুস্থ হয়ে আবারও ফুটবলের জগতে ফিরতে চায়। স্মৃতিচারন করতে যেয়ে বনি বলেন,আমি আঘাত পাওয়ার পরও সেদিন খেলা চালিয়ে গিলাম।ওই দিন আমরা দুই শুন্য গোলে প্রতিপক্ষকে হারায়। সেদিন ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’ চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল তার দল। ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ ট্রফিটি স্থানীয় এমপি শেখ আফিল উদ্দিন আমার হাতে তুলে দিয়েলেন। এরপর আর মাঠে নামতে পারেনি।এ সব আজ শুধুই স্মৃতি।
বনির ফুটবল কোচ সাবেক জাতীয় ফুটবলার সাব্বির আহম্মেদ পলাশ বলেন, বনি একজন মেধাবী ফুটবলার। সে প্রতিটি ম্যাচে গোল কিপিংয়ে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে।পায়ের ইনজুরির জন্য দীর্ঘ ৯ মাস সে ফুটবল থেকে দূরে রয়েছে। সমাজের বিত্তবান ও ফুটবল প্রেমীদের কাছে বনির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান তিনি।
বিশেষ প্রতিনিধি







