Friday, December 5, 2025

বারোবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে পাঁচজনই এমএম কলেজের ছাত্র

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: বারোবাজারে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে পাঁচজনই ছিলেন যশোর সরকারি এমএম কলেজের এম এ শেষ বর্ষের ছাত্র। পরীক্ষা শেষে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। কিন্তু, শিক্ষাজীবনের শেষ পরীক্ষা দিয়ে তারা কেউই আর বাড়ি ফিরতে পারলেন না। পথিমধ্যে বাস উল্টে চলে গেলেন পরপারে! এসব পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম।
অনেকের অভিভাবক শেষ সম্বল দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া শিখিয়েছেন-ভবিষ্যতে সন্তান আয় রোজগারের মাধ্যমে পরিবারের অভাব, অনটন দূর করবেন আশায়। কিন্তু, মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা সেই সন্তানকে অকালে কেড়ে নেয়ায় এসব পরিবারের সদস্যদের জীবনে নেমে এসেছে গভীর অন্ধকার।
এদিকে, বারোবাজারে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও একজন বেড়ে ১২ হয়েছে। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বশেষ মারা যান আব্দুর রশিদ মোড়ল নামে একজন। তার বাড়ি নড়াইলে। ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
বুধবার বিকেল ৩টার দিকে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের বারোবাজারে যাত্রীবাহী বাস উল্টে ঘটনাস্থলে মারা যান নয় যাত্রী। এছাড়া, হাসপাতালে নেয়ার পথে একজন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন এবং কোটচাঁদপুরে বাড়িতে একজন মারা যান। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন নয়জন পুরুষ, দু’জন নারী ও একটি কন্যাশিশু।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোর সরকারি এম এম কলেজের যে পাঁচ শিক্ষার্থী ওই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তারা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের রনজিত দাসের ছেলে সনাতন দাস (২৫), চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে রেশমা (২৬), কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিণদিয়া গ্রামের হারুন অর রশিদ সোহাগ (২৫), কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের মুস্তাফিজুর রহমান কল্লোল (২৪) এবং সদর উপজেলার নাথকুন্ডু গ্রামের ইউনুস আলী (২৬)। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রত্যেককে নিজ নিজ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন এবং সনাতন দাসকে দাহ করা হয়েছে।
নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কালীগঞ্জের ভাটপাড়া গ্রামের সনাতন দাসের পরিবারে সদস্যদের মধ্যে আহাজারি লক্ষ্য করা যায়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছিলেন বাবা রনজিৎ দাস। কিন্তু, শিক্ষা জীবনের শেষ পরীক্ষা দিয়ে আর বাড়িতে ফিরতে পারলেন না সনাতন!
সনাতন দাসের বাবা রনজিৎ দাস বলেন, ‘খুব কষ্ট করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। খেয়ে না খেয়ে তার খরচ দিচ্ছিলাম। একদিন সে চাকরি করে অভাব ঘুচাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে’।
কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের নিহত মুস্তাফিজুর রহমান কল্লোলের ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বড় আশা ছিল ভাইকে নিয়ে। বড় আশা করে তাকে লেখাপড়া শিখানো হয়েছে। চালকের অসচেতনতায় বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল তার। আমার পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে গেলো’।
কল্লোলের দুলাভাই আলমগীর কবির বলেন, ‘পরিবার ও সরকার এত টাকা খরচ করে তাদের লেখাপড়া শিখিয়েছে। গাছটি লালন পালন করে মাত্র ফুল ফুটেছে। সে থেকে ফল পাওয়ার আশা ছিল প্রত্যেকের। সেই ফুল অকালে ঝরে গেল’। তিনি প্রশ্ন করেন-‘এ দায় কার’?
দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বাসের ছেলে ওয়ালিউল আলম শুভ (২৫), ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া গ্রামের মৃত মহরম বিশ্বাসের ছেলে আব্দুল আজিজ (৭৫), বাসের চালক মাগুরা জেলার উজ্জল হোসেন (৩৫), কালীগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ (২৬), যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শিলা খাতুন (২৮) ও তার ভাসুরের মেয়ে খাদিজা খাতুন (৭) এবং নড়াইলের আব্দুর রশিদ মোড়ল।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুর রশিদ মোড়ল নামে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তার বাড়ি নড়াইলে।
আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর