Friday, December 5, 2025

যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নতুন মোড়

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবু-গফুরের বিপরীতে লতিফ-ছোট ঐক্য পরিষদ গঠন

শুক্রবার যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। প্রতিবারই আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থী থাকলেও এবার তারা মাঠে নেই। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের শক্তিশালী প্রার্থীরা যখন মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে, ঠিক তখনই জামায়াত সমর্থিত প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক পদে আবু মোর্তজা যুক্ত হয়েছেন। তৈরি হয়েছে লতিফ-ছোট ঐক্য পরিষদ। নির্বাচনের দুই দিন আগে এ প্যানেল ঘোষণা করে মাঠ চষতে শুরু করেছেন তারা। শুধু তাই নয়, বামপন্থি সংগঠন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির দুইজন প্রার্থী যুক্ত হয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে। সব মিলিয়ে নির্বাচনে মোড় ঘুরেছে বলে দাবি করছেন সাধারণ আইনজীবীরা। এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমিতি চত্বরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনটি রাজনৈতিক ধারার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ২২ জন প্রার্থী ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আইনজীবীরা বলছেন, দুইটিই শক্তিশালী প্যানেল। সভাপতি পদে দুই প্যানেলের দুই প্রার্থী থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু। সেক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে হবে ত্রিমুখী লড়াই।

আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্যানেলটি প্রথমে ১১টি পদে প্রার্থী দেয়। তারা হলেন, সভাপতি পদে সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর, সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম পান্নু, সহ-সম্পাদক সেলিম রেজা, গ্রন্থাগার সম্পাদক কামরুল হাসান সোহেল, সদস্য মঞ্জুরুল মাহমুদ লিটু, মৌলুদা পারভীন, রেহেনা খাতুন, শাহাজাহান কবির বিপ্লব ও মেহেদী ইমাম বাপ্পী। পরে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দুইজন প্রার্থী যোগ দেন।  তারা হলেন, সহসভাপতি পদে বাসুদেব বিশ্বাস ও সহকারী সম্পাদক পদে আশরাফুল আলম। এক্ষেত্রে পূর্ণ প্যানেল হয়ে আরও শক্তিশালী হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এ প্যানেল।

এদিকে, জামায়াত সমর্থিত লইয়ার্স কাউন্সিলের ঐক্য পরিষদ প্রথমে আটটি পদে প্রার্থী দিলেও পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আ ক ম মনিরুল ইসলাম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। যা নিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে শুরু হয় কানাঘুষা। শেষমেশ চমক হিসেবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা ছোটকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী করে নতুন প্যানেল ঘোষণা করে লতিফ-ছোট ঐক্য পরিষদ। এতে করে নির্বাচনের মোড় ঘুরে যায়। এই পরিষদের প্রার্থীরা হলেন, সভাপতি পদে আব্দুল লতিফ, সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা ছোট, সহসভাপতি আলমগীর সিদ্দিক, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল করিম মণ্ডল, গ্রন্থাগার সম্পাদক এস. এম. শাহরিয়ার হক রিফাত, সদস্য শফিকুল ইসলাম ও আজহারুল ইসলাম।

এছাড়া, সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু। তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

আইনজীবীদের মতে, এবারের নির্বাচনের মূল আকর্ষণ সাধারণ সম্পাদক পদ। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা ছোট দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় আইনজীবী নেতা। এরআগেও একাধিকবার তারা একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। হাড্ডাহাড্ডি লাড়াইয়ে কেউ হেরেছেন কেউ চিতেছেন।  তাদের রয়েছে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। অন্যদিকে তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতুও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছেন। তার বাবা আব্দুস শহীদ লাল সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় পারিবারিকভাবে তারও একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। এছাড়া তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ রয়েছে তার পক্ষে। ফলে পদটি নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যাবে। এছাড়া সভাপতি পদেও বিএনপি ও জামায়াতপন্থী প্যানেলের মধ্যে কঠিন লড়াই হবে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহসীন আলী জানান, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পথে। আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত জুমার নামাজের জন্য বিরতি থাকবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৩৬ জন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সমিতি চত্বরে প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ও ব্যক্তিগত যোগাযোগে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কে এগিয়ে, এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। তবে, যোগ্য প্রার্থীদের হাতেই দেওয়া হবে নতুন নেতৃত্ব এমনটি দাবি করছেন সাধারণ আইনজীবীরা। তবে, প্রতিবছরই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থী ও সমর্থকরা মাঠে থাকলেও এবার তারা অনেকটা চুপচাপ রয়েছেন।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর