যশোরে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনায় ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন নস্যাতের চেষ্টার অভিযোগ
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম অভিযোগ করেছেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের’ মাধ্যমে অর্জিত স্বপ্নকে চুরমার করতে একটি দেশবিরোধী অপশক্তি নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি এই অপশক্তি ও তাদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা বিএনপি আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট দেশবিরোধী অপশক্তিকে বিদায় করার পর আমরা নতুন সূর্যোদয়ের আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্নকে চুরমার করার জন্য দেশবিরোধী একটি অপছায়া দেশের ওপর পাখা মেলছে।”
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “দেশবিরোধী অপশক্তি এবং তাদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে। নিজেদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।”
বিএনপির রাজনীতির মূলমন্ত্র তুলে ধরে অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, “দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষা দেওয়ার অঙ্গীকার এবং দেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করার ব্রত নিয়ে আমরা বিএনপির রাজনীতি করি। আমাদের সামনে শহীদ জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার মতো নেতৃত্ব এবং আদর্শ রয়েছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিটি সংকট ও সমস্যা অত্যন্ত শক্তভাবে মোকাবেলা করা।”
তিনি আরও বলেন, “এই দেশ বারবার সংকটে পড়েছে। কিন্তু ইতিহাস বলে, প্রতিটি সংকটে দেশের সাধারণ মানুষ ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি অপশক্তিকে প্রতিহত করে বিজয় অর্জন করেছে। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আবারও দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।”
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাঁদের আকাঙ্ক্ষার জনগণের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। সেই বাংলাদেশ গড়ার একটি মাত্র উপায়—সমগ্র দেশে ধানের শীষের জোয়ার সৃষ্টি করতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে দেশের রক্ষার প্রতীক ধানের শীষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে। জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের এবং বেগম খালেদা জিয়ার অসামান্য ত্যাগের বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে হবে। তার জন্য সকলে বিভেদ ভুলে রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।”
আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ (সদর) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
তিনি বলেন, “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র বর্তমান। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নতুন করে জিয়াউর রহমানের সৈনিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শপথ নিতে হবে। ঠিক যেভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে চব্বিশে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং আশির দশকে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটিয়েছি। ঠিক একইভানে বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রয়োজনে এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, “মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাহসিকতার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কারণে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার অভিপ্রায়ে বিকল্প নেতৃত্ব এবং ব্যক্তিকে খুঁজে না পাওয়ার কারণে সিপাহী-জনতা তাকে মুক্ত করে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসীন করেন।”
তিনি আরও বলেন, “একজন সামরিক কর্মকর্তা হয়েও তিনি উপলব্ধি করেছিলেন একটি দেশ গণতন্ত্রহীন থাকতে পারে না। তিনি সামরিক শাসনের পরিবর্তে গণতন্ত্র কায়েম করার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থা করলেন। যেই নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ মুজিবের হাতে বিলুপ্ত আওয়ামী লীগ অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। আজকে যারা ভারতে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, জিয়াউর রহমানের আনুকূল্য এবং করুণা নিয়ে তারা সেদিন দেশে ফেরত আসার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু তাদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে।”
অমিত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “স্বাধীনতার আগে-পরে বারবার দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্র হয়েছে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে। কারণ বাংলাদেশের ভাগ্যের সাথে জিয়া পরিবারের ভাগ্য অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিএনপির একটি কর্মী বেঁচে থাকতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা যাবে না।”
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু এবং নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু প্রমুখ।
আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম।







