Saturday, December 6, 2025

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, উপস্থিত রাজনীতিক ও উপদেষ্টারা

আজ শুক্রবার বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অধ্যাপক ইউনূস অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ–সভাপতি আলী রীয়াজ।

এ সময় মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন প্রমুখকে দেখা যায়।

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে দুপুর ১টার দিকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে একদল ব্যক্তি মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন। তাঁদের সরাতে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, এতে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ধানমন্ডি ও আসাদ গেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলে বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “খুব ভালো সনদ হতে যাচ্ছে। এখানে কিছু ভিন্নমত আছে, সেগুলো আমরা ভবিষ্যতে সমাধান করার চেষ্টা করব। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে গণতন্ত্রের পথে এটি একটি শক্তিশালী যাত্রা হবে।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “সনদ স্বাক্ষরের দিনে এমন সংঘর্ষ বিব্রতকর ও লজ্জাজনক। ঐকমত্য কমিশনের ঘোষণার পরও এই ঘটনা অভ্যুত্থানের জন্য ভালো বার্তা নয়।”

আইনজীবী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা শিশির মনির জানান, “জুলাই যোদ্ধারা যে তিনটি দাবি জানিয়েছে, তার বেশিরভাগই কমিশন গ্রহণ করেছে এবং সনদে সংশোধন এনেছে। এখন তাদের আর উদ্বেগের কারণ থাকার কথা নয়।”

ক্ষোভ ও বিক্ষোভের মুখে দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদের পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দেয়। বেলা ২টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু দল এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না।

বাম ধারার চারটি দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ—ঘোষণা দিয়েছে যে, সংশোধিত খসড়া না পাওয়া পর্যন্ত তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না।

বিক্ষোভ ও উত্তেজনার মধ্যেও জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। তবে ভিন্নমত ও সংশোধনের দাবি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ঐকমত্যের এই পথচলায় এখনও অনেক সমঝোতা বাকি।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর