Monday, April 29, 2024

খায়েরুজ্জামানের কাছে জিম্মি শিক্ষকসহ স্কুল পরিচালনা কমিটি

- Advertisement -

নড়াইল প্রতিনিধি:- নড়াইল সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের কালিপ্রসন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতিই বিদ্যালয়ের সর্বেসর্বা। তিনি যা ভাববেন এবং বলবেন তাই-ই করতে হবে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকসহ পরিচালনা কমিটির সকলকে। নিজের হাতের মুঠোয় রেখে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সকল কর্মকান্ড। এর বিরোধিতা করলে তার কপাল পুড়েছে। লেখাপড়ার দৌড় ততটা না থাকলেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে হাত পাকিয়েছেন অনেক আগেই। আদালতে তার নামে বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে। এমন অভিযোগ বিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত বেশ কয়েকজনের। এই বিদ্যালয়ের সভাপতির নাম মো.খায়েরুজ্জামান মোল্যা। বিদ্যালয় এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নানা খাত থেকে ৪১ লাখ ১৮ হাজার ২৩৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এর প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ তাকে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। তখন থেকেই বিদ্যালয় কতৃপক্ষ স্বপন কুমারের বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতনভাতা ও উৎসব ভাতা বন্দ করে দেয়। এছাড়া সহকারী শিক্ষক মোঃ বখতিয়ার হোসেন কে সামান্য কারণে কারণ দর্শন নোটিশ দিয়ে বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন। মোহাম্মদ বখতিয়ার হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে সামান্য কারণে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে আমি জবাব দিলেও আমার বেতন বন্ধ করে রেখেছেন। সভাপতি মহোদয় সকলের সাথে খারাপ ও গালিগালাজ করেন। ভয়ে কেউ মুখ খুলেনা আমি খুলেছি বলেই আমার বেতন বন্ধ। এদিকে সভাপতির নির্দেশে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে স্থায়ী বরখাস্তের অনুমতি চেয়ে পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোড়ল আবুল হোসেন ২০২১ সালের ২৪ মার্চ যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। শিক্ষা বোর্ডের আপিল এন্ড আর্বিট্রেশন কমিটি বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নড়াইল জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আনিসুর রহমানকে দায়িত্ব দেন। তদন্ত কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোন সত্যতা না পাওয়ার প্রতিবেদন দাখিল করেন। যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মে.সিরাজুল ইসলাম স্বপন কুমারের বকেয়া বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার সমুদয় অর্থ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করলেও বিদ্যালয় কতৃপক্ষ তা পরিশোধ করেন নি। জানতে চাইলে স্বপন বিশ্বাস বলেন,বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতির মো.খায়ের মোল্লার নানা অনিয়মসহ কথামত কাজ না করায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। যে কারণে আমাকে হেনস্তা করার জন্য এই ধরণের অনভিপ্রেত কর্মকান্ড চালিয়েছেন। তিনি বলেন,বিদ্যালয় প্রদত্ত আমার ৩০ মাসের বেতন ও উৎসবভাতা পরিশোধ করেন নি। বর্তমান প্রধান শিক্ষক গত ০৮-০২-২৪ তারিখে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে প্রত্যয়ন পত্র লিখেছেন যে সভাপতি মামা খাইরুজ্জামান মোল্লার বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই সেটা মিথ্যা। সভাপতির নামে নড়াইল আদালতে একাধিক চলমান রয়েছে। খোজ নিয়ে জানাগেছে,বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের শেখর বিশ্বাসের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। আইনগত জটিলতা এবং রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্দ হয়ে যায়। কিন্তু খায়ের মোল্লা সেই ৮ লাখ টাকা শেখর বিশ্বাসকে ফেরত দেন নি। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়ের সভাপতি খায়ের মোল্লা সম্প্রতি বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ ৫ জন কর্মী নিয়োগে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। সেই টাকা বিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হয়নি। বিষয়টি জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোড়ল আবুল হোসেন শিক্ষকসহ ৫ জন কর্মী নিয়েগে অর্থ নেবার বিষয়টি এড়িয়ে যান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএ পাশ হতে হবে এমন আইন জারি করেছেন। তিনি দাবি করেন তাহলে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি পদে নিয়োগ পেতে হলে এমন আইন জারি করা উচিৎ। বিদ্যালয়ে শিক্ষকসহ কর্মচারি নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের বিষয়টি জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. খায়ের মোল্লা অর্থ নেবার কথাটি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন,আমি যতবার সভাপতি হয়েছি কোন দিনও টাকার প্রতি লোভ করিনি। আমি চেয়েছি বিদ্যালয়ে শিক্ষকর মান ভালো হোক। ছেলে মেয়ে লেখাপড়া শিখে এলাকার মুখ উজ্জল করুক। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,আমার বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা ছিল তা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

রাতদিন ডেক্স/জয়-২

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত