Thursday, May 2, 2024

স্বামীর পেনশনের টাকা তুলতে ১০ বছর ধরে ঘুরছেন স্ত্রী

যশোর প্রতিনিধি ।। গত ২০১৩ সালের ১১ই আগস্ট মারা যান যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মহিরন গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল গনি হাওলাদার। তিনি মারা যাওয়ার পর গত দশ বছর ধরে তার পেনশন ভাতা তুলতে হিসাবরক্ষন অফিস ও সাতক্ষিরা পুলিশের রিজার্ভ অফিসে ধর্না দিতে হচ্ছে আব্দুল গনি হাওলাদারের ষাটোর্ধ স্ত্রী সৃর্যবান বিবিকে। পেনশনের টাকার আশায় ঘুরতে ঘুরতে হতাশ গোটা পরিবারটি।
নিয়মানুযায়ী একজন সরকারী চাকুরীজিবী আবসরে যাওয়ার পর মাসিক পেনশন ভাতা নিয়ে চলে তার পরিবার। ওই পেনশনভোগী মারা গেলে পেনশন পাবে তার উত্তরাধিকারী হিসাবে তার স্ত্রী অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান থাকলে সেই সন্তান।
মৃত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল গনি হাওলাদারের পরিবার জানায়, ২০০৬ সালের ৭ই মার্চ সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ থেকে অবসর গ্রহন করেন আব্দুল গনি। যার পিপিও নং- ১৩৪১। পেনশন ভোগরত অবস্থায় ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন আব্দুল গণি।
মারা যাবার তিন মাস পর মৃত আব্দুল গনি’র স্ত্রী সৃর্যবান বিবি মৃত স্বামীর পেনশন তুলতে বাঘারপাড়া উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিসে যান। এ সময় তৎকালীন উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিসার জিল্লুর রহমান মৃত আব্দুল গনির সকল কাগজপত্র জমা দিতে বলেন। অফিসের নিয়ম অনুযায়ী সকল কাগজপত্র জমা দিলেও কোন কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহন করেননি উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিস। দির্ঘদিন এ দার থেকে ও দার ঘুরিয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিসার বলেন, ‘আপনার স্বামীর পেনশন সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিস থেকে মঞ্জুরী করিয়ে নিয়ে আসেন তাহলে আপনার মৃত স্বামীর পেনশন ভাতা পাবেন তাছাড়া পাবেননা।’
এমতাঅস্থায় সরকারী নিয়ম অনুযায়ী মৃত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী সৃর্যবান বিবি সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিসে সকল কাগজ পত্র জমা দেন। পেনশন আবেদন সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিসে জমা দিলে সাতক্ষীরা রিজার্ভ অফিস থেকে বাঘারপাড়া থানা পুলিশকে উত্তরাধিকারী নির্নয় সংক্রান্তে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি প্রেরন করেন।
বাঘারপাড়া থানা পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনে মৃত আব্দুল গনি কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানাদি নাই, মৃত পেনশনারের স্ত্রী সৃর্যবান বেগমকে তার পেনশনের উত্তরাধিকারী হিসাবে দেখানো হয়। মৃত পেনশনারের স্ত্রী সৃর্যবান বিবি পুলিশ প্রতিবেদন রিপোর্ট অনুযায়ী সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিসে গেলে বিভিন্ন হয়রানী করে তাকে সেখান থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এ সময় সাতক্ষীরা রিজার্ভ অফিস থেকে কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে, বলা হয় বাঘারপাড়া উপজেলা হিসারক্ষন অফিসে যেতে।
বাঘারপাড়া উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসে গেলে সেখান দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেন, ‘সাতক্ষীরা রিজার্ভ অফিস থেকে আপনার পেনশন মঞ্জুরীর কাগজপত্র অত্র অফিসে আসেনি।, এ ভাবেই ১০ বছর ধরে বাঘারপাড়া উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিস ও সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিসে ঘুরছে মৃত পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রী।
মৃত পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রী সৃর্যবান বিবি জানান, এ পর্যন্ত সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার এবং ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ওয়েল ফেয়ার এন্ড পেনশন বিভাগে মৃত স্বামীর পেনশন পাওয়ার জন্য আবেদন দরখাস্ত করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী পেনশনারের স্ত্রী সৃর্যবান বিবি বলেন, সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিসে গেলে আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি কেন আসেন এ অফিসে? আমরা আপনাকে না ডাকলে আপনি আসবেন না। আপনি যোগাযোগ না করে বারবার অফিসে কানো আসেন।’
দুঃখ প্রকাশ করে সৃর্যবান বিবি বলেন, ’আমার স্বামী মারা যাবার পরে থেকে আমি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারি না। স্বামী বেচে থাকতেই আমি প্যারা টাইফেডে আক্রান্ত হয়ে বাম হাতে স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারি না। আমার স্বামী দির্ঘদিন বাংলাদেশ পুলিশে দেশসেবার কাজে নিয়োজিত থেকে ডিউটিরত অবস্থায় আসামী ধরতে গিয়ে পঙ্গুত্ব হয়ে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ থেকে আবসরে আসেন। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমি তার পেনশন পেতে বাঘারপাড়া হিসাবরক্ষন অফিস ও সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিসে ছুটাছুটি করে আমিও আমার স্বামীর মতো মৃত্যুপথ যাত্রী।
হতাশ হয়ে তিনি বলেন, ‘জানিনা সাতক্ষীরা পুলিশের রিজার্ভ অফিস কোন কারনে আমার স্বামীর পেনশন ফাইল আটকে রাখেছে, জীবিত থাকতে হয়তো আমার স্বামীর টাকা সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিস থেকে মঞ্জুরি পাবো না। আমার মৃত্যুর পরেও এই টাকা কেউ পাবে বলে মনে হয় না।
চোখ মুছতে মুছতে মৃত পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রী বলেন, এখন যদি আপনাদের (সাংবাদিকদের) লেখালেখি যদি উর্ধতন কোন কর্মকর্তার নজরে আসে, আর তাছাড়া আমি নিরুপায়।’
এবিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিসার শাহানা আক্তার বলেন, ‘আমি মৃত পেনশনারের স্ত্রীর সকল কথা শুনে সাতক্ষীরা জেলা হিসাবরক্ষন অফিসে যোগাযোগ করেছি। সর্বশেষ সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর পেনশন মঞ্জুরীর ব্যাপারে লিখিত পাঠিয়েছি তিন মাস হতে চলেছে এখনো সাতক্ষীরা থেকে আমার পত্রের কোন জবাব আসেনি।
তিনি বলেন, ‘পেনশন আইনে আছে একজন মৃত পেনশনারের মৃত্যুর ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নিস্পতি করতে হয়। আমি মৃত পেনশনারের মঞ্জুরীর কাগজ পত্র সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার হতে পাওয়া মাত্রই দুই দিনের মধ্যে নিস্পত্তি করবো আপনারা যত দ্রুত পারেন মঞ্জুরি করিয়ে নিয়ে আসুন।
রাতদিন ডেস্ক/জয়-০২
- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত