Friday, April 26, 2024

সন্তানের বায়না পূরণই কাল হলো তহমিনার, স্বামী-সন্তান হারিয়ে নির্বাক

- Advertisement -

ছয় বছরের শিশু আরাবুর রহমান তাওসিন বায়না ধরেছিল বাবার সঙ্গে হোটেলে পরোটা খাবে। ছেলের বায়না মেটাতে তাকে নিয়ে বাড়ির পাশের বাজারে গিয়েছিলেন বাবা হাবিবুর রহমান। তবে পরোটা আর খাওয়া হয়নি। হোটেলে প্রবেশের আগেই দ্রুতগতির কাভার্ড ভ্যান বাবা-ছেলেকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় বাবা-সন্তান। স্বামী-সন্তান হারিয়ে শোকে নির্বাক হয়ে পড়েছেন তহমিনা।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মণিরামপুর উপজেলার বেগারীতলা এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা-ছেলে। এই ঘটনায় আরও তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন—বেগারীতলা বাজারের পাশের টুনিয়াঘরা গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪০), তাঁর আরাবুর রহমান তাওসিন (৬), একই গ্রামের সামছুর রহমান (৭০), তৌহিদুল ইসলাম (২৮) ও জয়পুর গ্রামের জিয়াউর রহমান (৩৫)।

স্বামী আর ছেলের এমন মৃত্যুতে নির্বাক হয়ে গেছেন তহমিনা খাতুন। ঘটনার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কাউকে দেখলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছেন। কোনো কথা বলছেন না। মাঝে মাঝে সন্তানের নাম ধরে আহাজারি করছেন। স্বামী আর সন্তানহারা এই মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে টুনিয়া ঘরার আকাশ বাতাস। আশপাশের মানুষ সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।

কাঁদতে কাঁদতে তহমিনা আরও বলেন, ‘টেলিভিশন দেখতে দেখতে সকালে ছেলেটা বায়না ধরেছিল পরোটা খেয়ে মাদ্রাসায় যাবে। সেই পরোটাও খেতে পারল না রে……।’ আকাশের দিকে দুই হাত তুলে আর্তনাদ করে তিনি বলতে থাকেন, ‘কি এমন পাপ করেছিলাম আল্লাহ, যার কারণে একসঙ্গে আমার স্বামী আর ছোট ছেলেরে এভাবে কেড়ে নিতে হলো! এখন আমি কি নিয়ে বাঁচব। আমাদের কি হবে আল্লাহ? একসঙ্গে আমাদের দুটি প্রাণ নিয়েছে যারা তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে সরকারকে।’

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৭টার দিকে যশোর থেকে সাতক্ষীরাগামী একটি কাভার্ড ভ্যান যশোর-মনিরামপুর সড়কের বেগারীতলায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এ সময় কাভার্ড ভ্যানটি রাস্তার পাশে হোটেল, চায়ের দোকানসহ অন্তত দশটি দোকানে ধাক্কা দেয়। এতে চায়ের দোকান ও হোটেলে নাশতা করতে আসা ব্যক্তি ও পথচারী মিলে পাঁচজন মারা যান। ড্রাইভার ঘুমে অচেতন অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ঘটনার পরপরই কাভার্ড ভ্যান ফেলে পালিয়ে যায় চালক ও তাঁর সহকারী।

এদিকে, ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশ এসে আড়াই ঘণ্টা পর বেলা ১০টার দিকে ব্যারিকেড সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

ক্ষতিগ্রস্ত হোটেলমালিক আবু তালেবসহ বলেন, ‘হাবিবুরের বাড়ি বাজারের পেছনে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে রাস্তায় ওঠেন হাবিবুর। কাভার্ড ভ্যানটি এসে প্রথমে তাঁদের দুজনকে চাপা দেয়। এরপর কাভার্ড ভ্যানটি রাস্তার পাশের কয়েকটি দোকান ভেঙে নুরুল আমিনের চা দোকানে বসে থাকা লোকজনকে চাপা দিয়ে হোটেলে এসে ধাক্কা দিয়ে আটকে যায়। এরপর সবাই দৌড়ে এসে কাভার্ড ভ্যানের নিচ থেকে সামছুর, তৌহিদুল ও জিয়াউরের মরদেহ টেনে বের করে।’

নজরুল ইসলাম নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘মনিরামপুর সাতক্ষীরা সড়ক প্রশস্ত হওয়ার পরে এই সড়কের গাড়িগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই এই সড়কের কোনো না কোনো স্থানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছেই।’ তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের টহল জোরদার করার অনুরোধ করেন।

মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৪ জনের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আর এক শিশুর মরদেহ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ড্রাইভার ও হেলপার পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান।’

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত