Thursday, May 2, 2024

মোরেলগঞ্জে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার, ডায়ারিয়ার প্রকোপ বাড়ছে

- Advertisement -

এইচ.এম শহিদুল ইসলাম,মোরেলগঞ্জ(বাগেরহাট)প্রতিনিধিঃ উপকূলবর্তী মোরেলগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র এখন বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য হাহাকার ও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই দেখা দেয় এ সংকট। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন সহ পৌর এলাকায় খাবার পানির এ সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবার। পানীয় জলের জন্য সর্বত্র হাহাকার বিরাজ করছে। অপরদিকে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নলকূপে আর্সেনিক,অকেজো নলকূপ,পিএসএফ এর কারণে এ সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। ডায়ারিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে এলাকায়।
বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে জানা যায়, গত ১০ দিনে ৭০ জনেরও বেশি ডায়ারিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে মহিলা ও প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন মুফতি জানান, এ এলাকার লবনাক্ত পানি এবং শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের জন্য মানুষ বাধ্য হয়ে অনিরাপদ পানি পাণ করে। ফলে বর্তমানে ডায়ারিয়া সহ বিভিন্ন পনিবাহিত রোগের দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা গেছে, বেশ কিছু প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষ ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি আছেন। স্থান সংকুলান না হওয়াতে মেঝেতে বিছানা দেয়া হয়েছে অনেককে। নিশানাবাড়িয়া ইউনিয়নের হরতকিতলা গ্রামের সানজিদা কথা বলতেই পারছিলেন না। অনেক কষ্টে জানান, গত ২ দিন এখানে ভর্তি হয়েছেন। হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম গত ৬ দিন হল ডায়ারিয়া জনিত কারণে এখানে ভর্তি আছেন। এভাবে আরোও অনেকে। রোগী এবং তাদের আত্বীয় স্বজন সবাই মূলতঃ এ অবস্থার জন্য অনিরাপদ পানিকেই দায়ী করেন।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ সরকারি নলকূপ ও পিএসএফ অকেজো। পাশাপশি বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নির্মিত শত শত নলকূপও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মোরেলগঞ্জ পৌর সদরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসী সুপেয় বিশুদ্ধ পানির অভাবে অভাবনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। শত শত নলকূপের যন্ত্রাংশ ইতিপূর্বে চুরি হয়ে গেছে। একটি চোরাকারবারী চক্র এসব নলকূপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রাতের আঁধারে চুরি করে বিক্রি করছে।
গত আশ্বিন মাসে বৃষ্টির পর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো এ এলাকায় বৃষ্টির দেখা নাই। দীর্ঘদিন বৃষ্টির অভাবে প্রায় সব পুকুরের পানি এখন তলানিতে। উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিউধরা, নিশানবাড়ীয়া, খাউলিয়া,বলইবুনিয়া সহ অধিকাংশ ইউনিয়নের খালে বিলে এ মৌসুমে পানিতে অতিরিক্ত লবনাক্তার কারণে পুকুরের পানি পাণ করতে পারছে না এলাকাবাসী। অপরদিকে, পুকুরের পানি শুকিয়ে যাবার কারণে প্রতিটি গ্রামের বাসিন্দাদের নিরাপদ খাবার পানি সংগ্রহ করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। দূরÑদূরন্ত থেকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে, নৌকায় চড়ে খাবার পানি সংগ্রহ করার চেষ্ট চলছে। অনেকে খোলা পুকুর, খাল ও নদী নালার পানি পাণ করছে।
সদর ইউনিয়ন ও পৌরবাসীকে খাবার পানির জন্য সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয় পুরাতন থানার পুকুরের পানির উপর। গত একমাস হল এটিরও পানি সেচে পুনঃখননের কাজ চলছে। উপজেলা পুকুরের পানি কমে ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পৌরসভা ও সদর বাজারের পানির উৎস এ পুকুরগুলোর পানি না থাকার কারণে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও পৌর সদরের কুঠিবাড়ি,এসএম কলেজ পুকুর থেকে ময়লাযুক্ত পানি হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণেই বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ,পেটের পীড়া, ডায়ারিয়া, টাইফয়েড সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে শিশু সহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন।
এদিকে পার্শ্ববর্তী শরণখোলা উপজেলায় একই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের নিবিড় পর্যবেক্ষণে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে ভ্রাম্যমান প্লান্টের মাধ্যমে ওই উপজেলার সর্বত্র নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলেও এলাকায় এখনো এরকম কোন ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. শাহ-ই- আলম বাচ্চু জানান, উপজেলা প্রশাসন এবং পরিষদ যৌথভাবে জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ভ্রাম্যমান প্লান্ট এনে উপজেলার বেশ কয়েকেটি পয়েন্টে রাখা হবে। এছাড়াও ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সহ বিভিন্ন উপকরণও সরবরাহ করে উপজেলাবাসীর বর্তমান খাবার পানির এ সমস্যা সমাধান করা হবে। পৌর মেয়র এসএম মনিরুল হক তালুকদার বলেন, এ সমস্যার সমাধানের জন্য উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
মোরেলগঞ্জে উপজেলা ও পৌর প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন এনজিও এর সমন্বয়ে দ্রুত খাবার পানির তীব্র সংকট নিরোসনে উদ্যোগী হবে বলে এলাকাবাসীর বিশ্বাস।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত