Monday, May 20, 2024

অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় খুন হন নায়ক সোহেল চৌধুরী

- Advertisement -

গোয়েন্দা তথ্যনুযায়ী, নব্বই দশকের শেষের দিকে বনানী ‘ট্রাম্পস’ ক্লাবটিতে অধিপত্য ছিল বিত্তবানদের। ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আনাগোনাও। রাতভর বিভিন্ন অপকর্মের পরিকল্পনা হতো এই ক্লাবে। বনানী মসজিদের পাশেই একটি ভবনের আট তলায় ছিল ক্লাবটি। ক্লাবে উচ্চশব্দে গান ও অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ঢাকাই সিনেমার একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী।

১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। হত্যাকাণ্ডের দিনই নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় আদনান সিদ্দিকীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারি আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার অভিযুক্ত ৯ আসামির মধ্যে পাঁচজন পলাতক। তারা হলেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আবদুল আজিজ, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন ও আদনান সিদ্দিকী। এ ছাড়া আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী জামিনে আছেন। আর কারাগারে আছেন সানজিদুল ইসলাম ইমন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতেই সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিন সোহেল চৌধুরী তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয় ক্লাবটির নিরাপত্তাকর্মীরা। এরপর ওইদিন রাত আড়াইটার দিকে আবারও ঢোকার চেষ্টা করলে এই চিত্রনায়ককে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান। হত্যার পরপরই ধরা পড়েছিলেন আদনান।

এ হত্যাকাণ্ডে আসামি করা হয় আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আশীষ কুমার রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, ফারুক আব্বাসী ও সানজিদুল ইসলাম ইমনকে।

২০২২ সালে রাজধানীর গুলশান থেকে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আশিষ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

গ্রেফতারের পর র‌্যাব জানায়, ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই এই ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বিভিন্ন ইস্যুতে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এর শিক্ষা দিতেই সন্ত্রাসী ইমনকে দায়িত্ব দেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলাম। এর কয়েকমাস পর ১৭ ডিসেম্বর শেষ রাতে সোহেল চৌধুরী গুলশানের ট্রাম্পস ক্লাবে যান। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনসহ অন্যরা। ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে তারা। এই ঘটনায় আরো কয়েকজন আহত হন।

ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে চলে যায়। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর আসামিরা উচ্চ আদালতে রিট করলে স্থগিত হয়ে যায় মামলার কার্যক্রম। ২০১৫ সালে এসে আবার চালু হয় মামলাটি।

১৯৮৪ সালের নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমে চলচ্চিত্রে আসেন সোহেল চৌধুরী। ১৯৮৬ সালে পর্বত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিষেক হয় তার। মুত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চল্লিশটির অধিক সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৮৬ সালেই সহঅভিনেত্রী দিতিকে ভালোবেসে বিয়ে করেন সোহেল চৌধুরী। ১৯৮৭ সালে জন্ম হয় দিতি-সোহেল দম্পতির প্রথম সন্তান লামিয়া চৌধুরীর। ১৯৮৯ সালে এ দম্পতির ছেলে দীপ্ত চৌধুরীর জন্ম হয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে দিতি ও সোহেল চৌধুরীর দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ ঘটে।

-অনলাইন ডেস্ক

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত