Friday, May 17, 2024

পাকিস্তানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার পেছনের ইতিহাস

- Advertisement -

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো কমনওয়েলথ থেকে পাকিস্তানকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। সেই ভুট্টোই দুই বছরের মাথায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে আলিঙ্গন করে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করে নিয়েছিলেন লাহোর বিমানবন্দরে।

লাহোর বিমানবন্দরে সেদিন শেখ মুজিবুর রহমান সহ বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানানো হয় ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের পতাকা, লাউড স্পিকারে বাজানো হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।

তারিখটি ছিল ২৩শে ফেব্রুয়ারি, সাল ১৯৭৪। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকার পর সেটিই ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম পাকিস্তান সফর। লাহোরে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স, ওআইসি’র দ্বিতীয় সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশের সাত সদস্যের দলের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিব।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল যদিও ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতেই লাহোর গিয়েছিল, তারা সম্মেলনের শহরে পৌঁছায় তিন দিনের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন – মূল সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর একদিন পর। কারণ আগের দিন ২২শে ফেব্রুয়ারি জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পরই শেখ মুজিব লাহোরে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।

লাহোরে অনুষ্ঠিত হওয়া ওআইসি’র সেই সম্মেলনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাই ছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেয়া। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম গুলোয় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা ও সেটির সাথে সম্পৃক্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো।

কিন্তু বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নে চরম বিরোধী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো কোন প্রেক্ষাপটে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন? পাকিস্তানের স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক ভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

ভুট্টোর অবস্থান পরিবর্তন

বাংলাদেশকে স্বীকৃতির প্রশ্নে মি. ভুট্টো এতটাই একগুঁয়ে ছিলেন যে ৭২’এর জানুয়ারিতে একাধিক দেশের সাথে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন তিনি। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমসের ১৪ই জানুয়ারির প্রতিবেদনে খবর প্রকাশ করা হয় যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায় ভারতের পর বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড আর মঙ্গোলিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশকে যেই দেশ স্বীকৃতি দিবে, সেই দেশের সাথেই পাকিস্তান সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

দুই বছরের মধ্যেই মি. ভুট্টোর মনোভাব ইউ-টার্ন নেয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের চাপ আর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশে থাকা ৯০ হাজারের বেশি যুদ্ধবন্দীকে – যাদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তা ছাড়াও নারী ও শিশু সহ বেসামরিক ব্যক্তিও ছিলেন – আটক করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। আবার পাকিস্তানেও আটকে পড়েছিল প্রায় চার লাখ আটকে পড়া বাংলাদেশি। এর সাথে বাংলাদেশে আটকে পড়া উর্দুভাষী বিহারিদের হস্তান্তরের বিষয়টিও তখন সমাধান হয়নি।

বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় এই যুদ্ধবন্দীদের পাকিস্তানে ফেরানোর প্রক্রিয়া সেসময় বিলম্বিত হচ্ছিল।

এই যুদ্ধবন্দীদের ফেরানোর নীতিমালা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ এর জুলাইয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সিমলা চুক্তি হয় ও তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালের অগাস্টে দিল্লি চুক্তি হয়। এরপর ১৯৭৩’এর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় যুদ্ধবন্দীদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া।

এই যুদ্ধবন্দীদের ফেরানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য মি. ভুট্টোর ওপর চাপ ছিল পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ও মি. ভুট্টোর রাজনৈতিক বিরোধীদের তরফ থেকে।

যে কারণে ১৯৭৪ সালে যখন মি. ভুট্টো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেন, তখন পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ ঐ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করেন -বলছিলেন পাকিস্তানের সাংবাদিক হুসেইন নকি, যিনি সাংবাদিক হিসেবে লাহোরের ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

মি. নকি বলছিলেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ জানতো না যে সেখানে এই মাত্রার সহিংসতা চালানো হয়েছে। কারণ সেসময় টিভি চ্যানেল, পত্রিকা সব ছিল সরকার নিয়ন্ত্রিত।”

“যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মানুষ যখন ধীরে ধীরে জানতে শুরু করে, তখন থেকে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের সমর্থন তৈরি হয়। তাই ১৯৭৪ সালে মি. ভুট্টো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায় মানুষ তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল।”

এর পাশাপাশি ওআইসি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মুসলিম বিশ্বের সেসময়কার প্রভাবশালী নেতারাও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেছিলেন মি. ভুট্টোর ওপর।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবর অনুযায়ী, ২২শে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পরের বক্তব্যে মি. ভুট্টো বলেছিলেন, “আমি বলবো না যে এই সিদ্ধান্ত আমার পছন্দ হয়েছে। কিন্তু বড় দেশগুলো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে আমাদের উপদেশ দিয়েছে। আমাদের বিরোধীরা নয়, বন্ধু ও ভাইয়েরা এই সিদ্ধান্ত নেয়ার উপদেশ দিয়েছে।”

লাহোরে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরের সংবাদ সম্মেলনেও মি. ভুট্টো মুসলিম দেশগুলোর প্রভাবের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

কূটনৈতিক দূরদর্শিতা

মুসলিম বিশ্বের সে সময়কার প্রভাবশালী নেতাদের বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব তৈরি করার পেছনে শেখ মুজিবুর রহমানের কূটনৈতিক দূরদৃষ্টি বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন সে সময়কার কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা।

১৯৭৩ সালে সিরিয়া-মিসর আর ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের সময় শেখ মুজিব সিরিয়া ও মিশরের সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক পাঠিয়ে সহায়তা করেন ও উপহার হিসেবে চা পাঠান। বাংলাদেশ থেকে এই উপহার সামগ্রী নিয়ে গিয়েছিলেন কূটনীতিক মুহাম্মদ জমির, যিনি ১৯৭১ সালে মিশরের পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন

তিনি বলছিলেন, “সিরিয়া আর মিশরের জন্য সহায়তা পাঠানোর পর মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। যার প্রেক্ষিতে লাহোরের ওআইসি সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।”

তবে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পাকিস্তানের মাটিতে ঐ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অংশ নেবে কিনা, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। শেখ মুজিবুর রহমান সহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের লাহোরে নিয়ে যাওয়ার জন্য কুয়েতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল-জাবের আল-সাবাহ’র নেতৃত্বে সাত জনের একটি দল বাংলাদেশে পৌঁছায়। আলজেরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোরারি বুমেদিনের ব্যক্তিগত বিমানে করে তারা ঢাকায় আসেন ওআইসি সম্মেলন শুরুর কয়েকদিন আগে।

মি. জমির বলেন, আরবি ও ফরাসী ভাষায় পারদর্শী ছিলেন বলে শেখ মুজিব ওআইসি প্রতিনিধি দলের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেন তার উপর।

“আল-সাবাহ’র নেতৃত্বাধীন ওআইসি’র দলকে বঙ্গবন্ধু তার তিনটি শর্তের কথা বলেন। তিনি জানান যে বাংলাদেশ লাহোরে যাবে যদি সেখানে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং সকল মুসলিম রাষ্ট্রের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়”, বলছিলেন মুহাম্মদ জমির।

“আল-সাবাহ বঙ্গবন্ধুকে আশ্বস্ত করেন যে আপনার সব শর্ত মানা হবে। তারপর ২২শে ফেব্রুয়ারি মি. ভুট্টো স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়ার পরদিন মি. বুমেদিনের বিমানে করে লাহোর যায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।”

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন ঐ সময় পাকিস্তানের স্বীকৃতি পাওয়ার গুরুত্ব শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করেছিলেন।

“পাকিস্তানের স্বীকৃতি পেলে বাংলাদেশ অনেকগুলো মুসলিম দেশের স্বীকৃতি পাবে, যার ধারাবাহিকতায় বিশ্বের আরো অনেক দেশের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় সহজ হবে – এই বিষয়টি বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। যে কারণে পাকিস্তানের স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়টি তিনি সেসময় গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলেন”, বলছিলেন সেসময় সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হারুন হাবীব, যিনি ২৩শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল লাহোরে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

মুসলিম বিশ্বনেতাদের ভূমিকা

লাহোরের ওআইসি সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো, জুলফিকার আলী ভুট্টোর ওপর প্রভাব তৈরি করে বাংলাদেশের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা ও পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পেছনে সেসময়কার মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের বড় ভূমিকা ছিল।

সেসময়কার আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছিল যে বাংলাদেশকে লাহোরের ওআইসি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর পেছনে সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল, মিশরের আনোয়ার এল-সাদাত, আলজেরিয়ার হোরারি বুমেদিনের মত প্রভাবশালী নেতারা ভূমিকা রেখেছিলেন।

তবে ঐ সম্মেলনে পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন লিবিয়ার নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি – এমনটাই লিখেছেন পাকিস্তানের ফ্রাইডে টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক জাভিদ আলী খান, যিনি ১৯৭৪ সালের লাহোর ওআইসি সম্মেলনের সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তুন আবদুর রাজাকের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন।

ফ্রাইডে টাইমস পত্রিকায় ২০১৯ সালে লেখা তার ‘হোয়েন ভুট্টো স্কিমড উইথ গাদ্দাফি ইন ১৯৭৪’ প্রবন্ধে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন – অর্থাৎ ২৩শে ফেব্রুয়ারি – নৈশভোজের একটি ঘটনার বর্ণনা দেন।

সম্মেলনে আসা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের জন্য নৈশভোজের ব্যবস্থা ছিল মোঘল আমলে তৈরি হওয়া রাজকীয় ‘শালিমার গার্ডেনস’ কমপ্লেক্সে।

সেখানে নৈশভোজ শুরুর কিছুক্ষণ আগে শালিমার গার্ডেনসের দোতলার বারান্দায় মুয়াম্মার গাদ্দাফি আর ইয়াসির আরাফাতের সাথে হাজির হন শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো। তারা এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন যেখান থেকে নৈশভোজে উপস্থিত সব নেতারা তাদের দেখতে পাচ্ছিল।

তখন মুয়াম্মার গাদ্দাফি একহাতে শেখ মুজিবুর রহমানের হাত তুলে ধরেন আর অন্যহাতে তুলে ধরেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর হাত। এরপর দু’জনের হাত এক করে দিয়ে উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন ‘আখি, আখি’, আরবিতে যে শব্দটি ব্যবহার হয় ‘ভাই’ বোঝাতে।

জাভিদ আলি খানের লেখায় উঠে আসে যে এই ছোট্ট ঘটনাটি যে ঘটবে, তা পূর্ব নির্ধারিত ছিল এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই শীর্ষ নেতা যেন ভ্রাতৃত্বের এই ছোট প্রদর্শনীটি মঞ্চায়িত করেন, তাতে দুই নেতাকে রাজি করিয়েছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিজে।

মুসলিম বিশ্বে মি. গাদ্দাফির ব্যাপক জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে মঞ্চায়ন করা এই ছোট্ট কূটনৈতিক শিষ্টাচার দুই দেশের মানুষের মধ্যে বিরাজমান যুদ্ধ পরবর্তী তিক্ততা কিছুটা হলেও দূর করবে – সেই প্রত্যাশায় ঐ ছোট্ট নাটকের আশ্রয় নেয়া হয়েছিল বলে উঠে আসে জাভিদ আলী খানের লেখায়।

বাংলাদেশে যেভাবে দেখা হয়েছিল

শেখ মুজিবুর রহমানের লাহোর যাওয়া ও পাকিস্তানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি সেসময় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল বলে বলছিলেন সাংবাদিক হারুন হাবীব।

“যুদ্ধ শেষ হওয়ার আড়াই বছরের মধ্যে পাকিস্তানের স্বীকৃতি অর্জনকে একদিকে যেমন ইতিবাচকভাবে দেখা হয়েছিল, অন্যদিকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের এত অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি দল পাকিস্তান যাওয়ায় কিছু মানুষের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভও দেখা গিয়েছিল।”

মি. হাবীব বলছিলেন, “মানুষের মধ্যকার মিশ্র প্রতিক্রিয়ার বহি:প্রকাশ হয় ১৯৭৪ সালের জুন মাসে মি. ভুট্টো যখন ফিরতি সফরে ঢাকায় আসেন, তখন। সেসময় রাষ্ট্রের বিদেশি মেহমান মি. ভুট্টোকে স্বাগত জানিয়ে যেমন রাস্তায় মানুষ জড়ো হয়েছিল, তেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী জুলফিকার আলী ভুট্টোর বাংলাদেশে আসার প্রতিবাদেও রাস্তায় স্লোগান দিতে দেখা গেছে মানুষকে।”

তবে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় ১৯৭৪’এর লাহোর ওআইসি সম্মেলন এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতির খবরগুলো বেশ ইতিবাচক ভাবেই ছাপা হয়েছিল বলে বলেন মি. হাবীব।

হারুন হাবিবের মতে, পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সেসময় রাজনৈতিক অঙ্গনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল।

“সেসময় কিছু মানুষ বলেছিল যে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেয়া-না দেয়ায় বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না, যেমন এখনও কিছু মানুষ বলে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেসময় এর দীর্ঘমেয়াদি তাৎপর্য বুঝতে পেরেছিলেন, যে কারণে কিছু পক্ষের নিষেধ সত্ত্বেও পাকিস্তানে ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন।”

সুত্র: বিবিসি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত