মানিক বন্দোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ নিয়ে যশোরে আলোচনা ও পাঠ-প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার বিকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে সপ্তাহে একটি বই পড়ি’র আয়োজনে এই পাঠচক্রের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন।
তার আলোচনায় উঠে আসে বইটির আদ্যপান্ত আলোচনা এবং মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ব্যবহৃত বিভিন্ন ইজম বিশেষত মার্কসিজম, অদৃষ্টবাদ, ফ্রয়েডিজম এবং এর সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, গুরুত্ব ও তাৎপর্য; মানব-মানবীর প্রেম।
তিনি বলেন, ‘লিবিডো চেতনায় জর্জরিত এ উপন্যাসে মানবীয় প্রেম তাড়না ও মধ্যবিত্তের সংকটে এক গভীর অভিনিবেশ ঘটেছে এ উপন্যাসে। সমাজে বসবাসরত সকল মানুষের মাঝেই কিছু প্রবণতা থাকে যেটা বিভিন্নভাবে তাকে তাড়িত করে অসম কোন এক দ্বন্দ্বের দিকে যেটা আপাতদৃষ্টিতে কষ্টের তবে এটাই স্বাভাবিক এবং মাধ্যমে মানুষ আত্ম-শোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।’
সপ্তাহে একটি বই পড়ি’র প্রতিষ্ঠাতা সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ যশোরের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ্জাহান কবীরের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে এসময় উপস্থিত ছিলেন সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ আমানুল্ল্যাহ আমান। তিনি বলেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় শশী চরিত্রের মাধ্যমে গ্রামীণ কুসংস্কার চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। যশোর সরকারি মহিলা কলেজ যশোরের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির টানাপোড়নের ও অস্তিত্বের সংকট প্রতিফলিত হয়েছে এ উপন্যাসে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সুমন রেজার সঞ্চালনায় শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনটির সদস্য হরিদাস বিশ্বাস। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের জীবনী পাঠ করেন বায়জিদ হোসেন। এরপর একে একে আলোচনা ও পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করেন সপ্তাহে একটি বই পড়ি’র সদস্যরা। আলোচনা করেন মুরাদ হোসেন, আব্দুল কাদের, স্বপ্না খাতুন, নাজমা খাতুন, শিরিন সুলতানা, খন্দকার রুবাইয়া, অনিক হোসেন, ফয়সাল হোসেন, সামিউল আলম, উৎস, সুরাইয়া, জাকির, সাদিয়া, রুদাইবা প্রজ্ঞা। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে গান পরিবেশন করেন লাবণ্য এবং রাতুল হাসান খান। কবিতা আবৃত্তি করেন খন্দকার রুবাইয়া ও স্বপ্না খাতুন। সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বলন করে তৈরি করা হয় এক অকৃত্রিম আবহ। সাথে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। শীতের আগমনী সন্ধ্যা হয়ে ওঠে তুমুল রোমাঞ্চকর। কথা, গান ও কবিতায় শিল্পকলা একাডেমির মুক্ত মঞ্চ জমে ওঠে। গান পরিবেশন করেন অর্পিতা রায় লাবণ্য, রাতুল হাসান খান। গিটার বাজিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন পৃথিলা জেসমিন। কবিতা আবৃত্তি করেন লুবনাম ফারিয়া স্বপ্না, সুরাইয়া ইয়াসমিন ও খন্দকার রুবাইয়া।