Monday, May 20, 2024

মাছ,সবজি,ফল ও ফুল যশোর থেকে আড়াই ঘন্টায় পৌঁছাবে রাজধানীতে

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ অনেকটা সহজ হয়েছে। কমেছে মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি। সেই অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্র যোগ হযেছে রেল প্রকল্প। এই রেল প্রকল্পে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল যশোরের ব্যবসা বানিজ্যে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যশোরের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, রেল ব্যবস্থা চালু হলে সময়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে এ অঞ্চলের।
যশোর শহরের প্রাচীন রেল স্টেশন যশোর জংশন। এ স্টেশনের সাথে বেনাপোল দিয়ে ভারতে যাতায়াতে রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ অঞ্চলের কৃষিখাতে ও রয়েছে দেশব্যাপি সুনাম। দেশের প্রায় শিংহভাগ চাহিদা মেটায় যশোরের কৃষিখাত। এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় এখানকার সবজি,ফুল,ও মৎস। যশোরে রয়েছে বেনাপোল বন্দর, নৌয়াপাড়া নৌ বন্দর ও বসুন্দিয়া,রুপদিয়া বাজার। যেখানে গ্রীষ্মকালীন ফল নারকেল,কাঠাল,আম,লিচুসহ বিভিন্ন ধরণের ফলের মোকাম রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চালু হলে অরো সমৃদ্ধ হবে গোটা যশোর অঞ্চল। মাত্র আড়াই ঘন্টায় হবে যশোরের সাথে রেলপথে পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানীর যোগাযোগ। আসবে ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সদস্য হুমায়ুন কবির কবু বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিনাঞ্চল তথা যশোরের ব্যবসায় বানিজ্যের পরিধি গত এক বছরে অনেকাংশে বেড়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙা পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এটি যশোর পর্যন্ত বর্ধিত হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা বানিজ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যশোর মাছ, ফুল,ফল ও সবজিতে বিখ্যাত। যশোর থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চালু হলে দ্রুত সময়ে এগুলো রাজধানীতে পৌছাতে পারবে। পাশাপাশি এগুলো বহনের জন্য আমরা আগে থেকে ট্রেনে বিশেষ ওয়াগনের দাবি জানাই।
কৃষকরা বলছেন রেল চালু হলে সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহে কমবে খরচ। এতে তাদের লাভ বেশি হবে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বৃহৎ সবজির মোকাম সাতমাইলের ব্যবসায়ীরা বলেন, গত বছরও আমাদের সবজি ঢাকায় পাঠাতে গেলে সড়কে ভোগান্তিতে পড়তে হতো, ফেরিঘাটে দীর্ঘ সময় যানজটে সবজি পচন ধরতো। পদ্মা সেতু চালুর পরে এ ভোগান্তিটা কমে গেছে।
বসুন্দিয়া গ্রামের কৃষকরা বলেন, ট্রেন চালু হলে সকালে মাঠ থেকে তোলা সবজি দুপুরে ঢাকার কাঁচাবাজার ধরতে পারবে। এমনকি আমরাও সবজি নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করতে যেতে পারবো। এতে বহন খরচ কমবে লাভের পরিমাণও বেশি হবে।
শুধু সবজিতেই নয় মৎস খাতে ও পাবে এর সুফল। মৎস ব্যবসায়ী নেতারা বলছে, রেল ব্যবস্থায় যাতায়াতের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পন্য পরিবহণে খরচ কমে। এত ভোক্তা পর্যায়ে পাবে সুফল।
যশোরের চাঁচড়ার মৎস ব্যবসায়ীরা বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা ট্রাকে করে অল্প সময়ে ঢাকায় মাছ পাঠাই। তবে পদ্মা সেতু দিয়ে যশোরের সাথে রেল যোগাযোগ শুরু হলে আমরা ট্রেনে ওয়াগনে করে মাছ পাঠাতে পারবো। তখন সময় লাগবে আড়াই ঘন্টা। যেখানে বহন খরচ আগে ছিল ২০ হাজার সেখানে বহন খরচ হবে ১০-১৫ হাজার। ফলে চাষী ও ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমান বেশি থাকবে।
যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব অনেকটাই কমে আসবে। যাতায়াতে মানুষের দূর্ভোগ কমবে বলে দাবি যাত্রী ও রেল কর্মকর্তাদের। যশোর রেল স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রী বলেন, যশোর থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চালচল শুরু হলে আমরা সকালে যশোর থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস ধরতে পারবো। শুধু তাই নয় অনেক ভোগান্তি কমে যাবে।
আরেক যাত্রী বলেন, আমরা ২ বছর আগে কল্পনাও করতে পারিনি যে আড়াই ঘন্টায় যশোর থেকে ঢাকা যেতে পারবো। এখন বাসে পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানীতে যেতে সময় লাগে সাড়ে ৩ ঘন্টা। ট্রেন চালু হলে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘন্টা।
যশোর রেল স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, বর্তমান সরকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জন্য যে উন্নয়ন কাজ করেছে তার একটি বড় উদাহরণ হলো এই পদ্মা সেতু। এ পদ্মা সেতু দিয়ে রেলপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব হবে মাত্র ১৭২ কিলোমিটার। ফলে যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘন্টা। এদিকে ঢাকার সাথে যশোরের দূরত্ব কমবে প্রায় ৫২ কিলোমিটার। এই রেলপথ চালু হলে যেমন যাত্রীদের যাতায়াত সহজতর হবে তেমন যশোর আরো উন্নয়নের রোল মডেল হবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
রাতদিন ডেস্ক/জয়-০২
- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত