সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজ, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ফুলদাহ গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষের জেরে অর্ধশতাধিক পরিবারের পুরুষ সদস্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা। ফলে বোরো মওসুমে এলাকার অন্তত ৫০টি কৃষক পরিবারের ৭শ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিপক্ষের লোকেরা ইতোমধ্যে ৪টি সেচ পাম্প নিয়ে গেছে । বেশ
কয়েকটি ঘেরের মাছও নিয়ে গেছে। বাজারে যেতে না পেরে অসহায় জীবন জাপন করছেন এ সকল পরিবারের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হলেও যে কোন সময় আবারও রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এ বিষয় প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
ফুলদাহ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জাহাঙ্গির ফকির (৫২) বলেন, বোরো মওসুমে চারা রোপোনের সময় শেষের দিকে। পাটেশ্বরী বিলে তার ২০ বিঘা জমি এখনও অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। প্রতি বছর এ জমিতে বোরো আবাদ করতেন তিনি। প্রতিপক্ষের
ভয়ে তারা কেউ জমিতে যেতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে আগামি ১৫ দিন পরে এ সকল জমিতে চলতি মওসুমে বোরো আবাদ করা যাবেনা। এলাকায় সংঘর্ষের আগে ১৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করলেও পানির অভাবে সেই জমির ধানও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের আলাল মোল্যা বলেন, ছয় বিঘা জমির মধ্যে ৪ বিঘা জমিতে আবাদ করলেও দুই বিঘা জমিতে এখনও আবাদ করতে পারিনি। যে সকল জমিতে বোরো আবাদ করেছি পানির অভাবে সেই জমির ধানও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের
বাচ্চু শেখ বলেন, এখনও চার বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। যে জমিতে চাষ দিতে পারিনি সেই জমিতে এবছর ধান আবাদ করা সম্ভব হবেনা। দিদার শেখ বলেন, ছয় বিঘা জমির মধ্যে তিন বিঘা জমিতে চারা রোপন করেছি এবং তিন বিঘা জমিতে চারা
রোপন করতে পারিনি।
কৃষক মো: শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার একটা স্যালো মেশিন ও একটা মটর নিয়ে গেছে। ঘেরের সব মাছও মেরে নিয়ে গেছে। ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছি, এখন পানি দিতে যেতে পারছিনা। এখনও চার বিঘা জমিতে চাষই করতে পারিনি। এরকমভাবে পনেরো দিন থাকলে এই মওসুম আর এসকল জমিতে বোরো আবাদ করতে পারবোনা। আমার চাচাতো ভাই দিদারুল সরদারের একটা মেশিনও নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা।
জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার ফুলদাহ গ্রামের ফকির ও মোল্যা গোষ্টির বিবাদমান দুইটি গ্রুপ রয়েছে। ফকির গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেলিম ফকির এবং মোল্যা গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফসিয়ার মোল্যা। গত ১৪ জানুয়ারি ফকির গ্রুপের বিপ্লব ফকির চাচুড়ি-পুরুলিয়া বাজারে গেলে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পর দিন ১৫ জানুয়ারি রিংকু ফকিরকেও মেরে আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। ফলে উভয় পক্ষের ১৫-১৬ জন আহত হয়। এসময় ফকির গ্রুপের শরিফুল সরদার, তৈয়েব বেগ, রমজান, আলামিন বেগসহ ৮-১০ টি বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষ মামলা দায়ের করে এবং সকলেই বর্তমানে
আদালতের জামিনে রয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি আবারও হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে আবারও প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা প্রায় অর্ধশত পরিবারের পুরুষ সদস্যরা।
ফকির গ্রুপের নেতা সেলিম ফকির বলেন, মোল্লা গোষ্টির মধ্যে একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা রয়েছে। মুলত তার ইন্ধনেই তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা। ভয়ে বাড়ির যুবতী মেয়েদের আত্মীয় বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রশাসনের কঠোর হস্থক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অভিযুক্ত প্রতিপক্ষ মোল্যা গ্রুপের নেতা ফসিয়ার মোল্যার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তার ছেলে সবুজ মোল্যা এসব অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, আমাদের লোকজনদের উপর তারা হামলা করে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করেছে।
এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ এস আই টিপু সুলতান বলেন, আইন-শৃংখলা রক্ষার্থে সার্বক্ষনিক তারা এলাকাতে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক আছে। আশা করছি কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটবেনা।
কালিয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের জেরে গৃহবন্দি অর্ধশতাধিক পরিবার
- Advertisement -
- Advertisement -