Saturday, May 18, 2024

সুলতান মেলার পর্দা নামলো: চিত্রশিল্পী শহিদ কবীরকে দেওয়া হল ‘সুলতান স্বর্ণ পদক’

- Advertisement -

সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজ, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে ১৪ দিনব্যাপি জমজমাট সুলতান মেলার পর্দা নামলো। এবার ‘সুলতান স্বর্ণ পদক’ দেওয়া হলো বরেণ্য চিত্রশিল্পী শহিদ কবীরকে। সুলতান মেলার সমাপনি অনুষ্ঠান শুক্রবার (২০ জানুয়ারী) বিকেলে সুলতান মঞ্চে নড়াইল জেলা প্রশাসক ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, নড়াইল জেলা পরিষদ চেয়ারমম্যান এড. সুবাস চন্দ্র বোস, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ রবিউল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান নিলু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ দোলন মিয়া, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক মাহবুবা করিম মিনি, পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোঃ লিঃ এর মহা-ব্যবস্থাপক মোঃ তানভীর আল আজাদ, বিশিষ্ট নাট্যকার কচি খন্দকার, জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয় শিল্পী-২০২২ প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য্য মিলন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ পদকপ্রাপ্ত শিল্পীর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন এবং পদক পরিয়ে দেন।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘সুলতান স্বর্ণ পদক’ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৮তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ৭ জানুয়ারী নড়াইল জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শুরু হয় ১৪ দিনব্যাপি ‘সুলতান মেলা’। প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সস্টিটিউটের যৌথ সিদ্ধান্তে গুণি এই চিত্রশিল্পীকে ‘সুলতান পদক’ দেওয়া হয়।

শহীদ কবির ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুলতান পদক প্রাপ্ত চিত্রশিল্পী চিত্রশিল্পী শহিদ কবীর ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে (তৎকালীন ঢাকা গর্ভমেন্ট কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফট্স) থেকে বিএফএ-পাশ করে একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে লালন ও বাউলের উপর তাঁর সিরিজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আঁকা তাঁর বিষয়গুলিকে মৃদু আবেগ এবং চিত্রকল্পের তরলতায় চিত্রিত করা হয়েছে এবং ফলাফলটি উদ্দীপক এবং সংবেদনশীল। তার সহানুভূতিশীল অবস্থান এবং শক্তিশালী অন্তর্দৃষ্টি তাকে বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ চিত্রশিল্পী এবং মুদ্রণকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি ১৯৮১ সালে স্পেনে চলে যান এবং ১৭ বছর পর ১৯৯৭ সালে ঢাকা শিল্পের দৃশ্যে পুনরুত্থিত হন । ইউরোপে অতিবাহিত গঠনমূলক বছরগুলি তার আগের অনুশীলনে একটি পূর্ণ মাত্রা যোগ করেছিল। যখন তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তিনি এমন একটি সাধারণ বাগধারার প্রবর্তন করেন যা প্রতিনিয়ত বাস্তবতা এবং বস্তুর একটি ছাপ তৈরি করে চিত্রণে উন্নীত করেন। জলের পাত্র, চা-পাতা, ফুলের ফুলদানি এবং পচা ফলগুলি এইভাবে এমন একটি জগতের মেটোনিমিক রেফারেন্স হিসাবে কাজ করে যেখানে একজন পথপ্রদর্শক হিসাবে সহানুভূতির সাথে ঘুরে বেড়ায়। ইটভাটা, নদীর দৃশ্য এবং কর্মজীবী নারীও তাঁর চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে। সামগ্রিক চেহারা বিবর্ণ এবং অমার্জিত, প্যাথোস অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।

চিত্রশিল্পী শহিদ কবিরের পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কারমেন অ্যারোশামদুজামেনা পুরস্কার, মাদ্রিদ (১৯৮৪)। তিনি ১৯৮০ সাল পর্যন্ত নয় বছর ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্টস-এ অধ্যাপনা করেন। কবির একজন ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী যিনি তার সময়কে ঢাকা এবং মাদ্রিদের মধ্যে ভাগ করেন। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্স শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন। এ পর্যন্ত তিনি দেশে ও বিদেশে ১২টি একক চিত্র প্রদর্শনী ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করেছেন। তিনি দেশে ও বিদেশে ৭টিরও বেশী পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

এবারের সুলতান মেলায় বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, লাঠিখেলা, কাবাডি, কুস্তি, ভলিবল, ঘোড়ার গাড়ি দৌড় প্রতিযোগিতা, আর্চারি, ষাড়ের লড়াই, ৫০টি স্থানীয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নাটক, কবি গান, জারি গান ও যাত্রাপালা পরিবেশনা এবং শিল্পীর কর্মময় জীবনের ওপর সেমিনার।
মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন আয়োজনসহ শতাধিক দোকান বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বসে। প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু, নারী-পুরুষ মেলা উপভোগ করতে আসেন।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত