পিচঢালা সড়ক। পায়ে সাদামাঠা একটা স্যান্ডেল আর অগোছালো একটা বোরখা পরে যেনো কারো অপেক্ষায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। পাতাবাহারি কালো-খয়রি ওড়নায় মুখ ঢাকা তার। মুখায়ব ও শারীরিক গঠন দেখে মনে হলো একাদশী বা দ্বাদশী পাঠের শিক্ষার্থী। পায়ের কাছে একটি মাঝারি সাইজের ব্যাগ। অনুমান করা গেল, বাবা-মা’র স্নেহ ভিন্ন অন্য কারো প্রতি অনুরাগের মাত্রাটা ঢের বেশি। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, একটি পালসার বাইক নিয়ে একটি ছেলে তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি তাকে হাত ইশারায় থামতে বললো। সে থামলো। কী কথা হলো তা শুনতে না পেলেও রকি ও জনি তাদের পিছু নিলো। মোবাইলে ওদের গাড়িতে উঠা ও চলে যাওয়ার দৃশ্য ধারণ করলো।
উপরের গল্পটি আমাদের গল্প নয়; গল্পটি নিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল নাটক তৈরির কাজ করছিলো। দৃশ্যধারণের এক পর্যায়ে ঘটে নানা অঘটন। সেটাই আমাদের গল্প।
নাটকের মাঝ দিকের একটি দৃশ্যে গল্পের নায়ককে দিয়ে ডিরেক্টর এমন একটি অভিনয় করাতে চায়, যেখানে সবুজ দড়ি হাতে নিয়ে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বের হবে, পথিমধ্যে বন্ধু মাহি’র সাথে দেখা হবে এবং সেখানে দু’জনের কিছু সংলাপ থাকবে। ঝামেলাটা এখান থেকে..। সুবজ কিছুতেই আত্মহত্যার জন্য হাতে দড়ি নিতে চায় না। বরং সংলাপের মাধ্যমে বুঝাতে চায়, সে তার জীবন আর রাখতে চায় না, তার কলঙ্কিত মুখ আর কাউকে দেখাতে চায় না। কিন্তু ডিরেক্টরের তাতে হবে না। লেগে গেল তর্ক। পক্ষ হলো দুটো। এক পক্ষ ডিরেক্টরের অন্যটা নায়কের।
নাটক-সিনেমা বা শর্ট ফিল্ম যে জীবনে প্রতিচ্ছবি তা ক’জন জানে? জীবনের অতীত ও বর্তমানকে দূরদর্শী কল্প-কাহিনীর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যে নাটকের মূল উদ্দেশ্য সেটাই তো জানে না অনেকে। অভিনয়ের কাজ হলো, হাসি-আনন্দ-কৌতুক, দুঃখ-বেদনা এবং নানা ট্রাজেডির মাধ্যমে দর্শককে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া সমাজের ক্ষত ও উত্তরণের পথ। সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ হলো, কুশিলব ও পরিচালকের দায়িত্ববোধ, তাদের কর্মদক্ষতা ও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ এবং সিনেমাটোগ্রাফির ওপর বিশেষ স্টাডি থাকা।
বিলাল মাহিনী
আর কে-০২