Sunday, May 19, 2024

মণিরামপুরে ভার্মি কম্পোস্টে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে দীপ্ত ভার্মি কম্পোস্ট এগ্রো লিঃ

- Advertisement -

শফিয়ার রহমান, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ কেঁচো’র সাথে গোবর, কঁচুরিপানা, খড়-কুটা, কলাগাছ অথবা বিভিন্ন ধরনের পঁচনশীল উপাদান ব্যবহার করে ‘দীপ্ত ভার্মি কম্পোস্ট ফার্টিলাইজার’ কেঁচো সার উৎপাদন করে কৃষি ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ‘দীপ্ত ভার্মি কম্পোস্ট ফার্টিলাইজার’ দীপ্ত এগ্রো বিডি লিমিটেড এবং এল.এ.এগ্রো লিমিটেডের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।

মণিরামপুর উপজেলার জামজামি গ্রামে দুই বছর আগে ৪০ শতাংশ জমিতে দীপ্ত এগ্রো বিডি লিমিটেড এবং এল.এ.এগ্রো লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কৃষি সেক্টরে সাড়া জাগানো সফল উদ্যোক্তা যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার বলিয়ানপুর গ্রামের ইফতেখার সেলিম অগ্নি’র পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় উচ্চশিক্ষিত এনজিও কর্মী সুলতানুজ্জামান তিতু গড়ে তোলেন ‘দীপ্ত ভার্মি কম্পোস্ট নামের খামারটি।

একটি বে-সরকারী সংস্থায় ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ প্রজেক্টে চাকুরি করার সুবাদে দক্ষতা অর্জনকারী যুবক সুলতানুজ্জামান চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ীতে এসে প্রথমে স্বল্প পরিসরে তার খামারে ৬টা রিং টবে মাত্র আড়াই কেজি কেঁচো দিয়ে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন শুরু করেন। এক বছরের মাথায় সেই নার্সারিতে এখন ৪টি সেডের ২৮টি হাউজে বর্তমান কেঁচো আছে ৩’শ কেজি। আর এতে উৎপাদিত কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যান্ত এলাকায় তিনি বাজারজাত শুরু করেছেন।

প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪২ মেট্রিক টন। যা দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প বলে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা সুলতানুজ্জামান তিতু দাবি করেন। তিনি জানান, এ প্রকল্পে উৎপাদিত সার বাংলাদেশের কৃষিতে রীতিমত সাড়া জাগানো পৃথিবী বিখ্যাত কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের উচ্চ ফলনশীল কাজুবাদাম চারা উৎপাদনকারী একমাত্র এবং বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এল.এ.এগ্রো লিমিটেডের বান্দরবনস্থ প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে।

একই সাথে কৃষিতে আরেক সাড়া জাগানো প্রতিষ্ঠান দীপ্ত এগ্রোর মালিকানায় বান্দরবন জেলার নাইখ্যংছড়ি উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম উচ্চ ফলনশীল কাজুবাদাম গার্ডেন দীপ্ত ক্যাশুস্টেট, দীপ্ত চুই ঝাল স্টেট, দীপ্ত সজিনা স্টেট, দীপ্ত সাইট্রাস স্টেট এবং প্রথম বানিজ্যিক এ্যাভোকেডো গার্ডেন দীপ্ত এ্যাভোকেডো স্টেটে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বান্দরবনে তাদের নিজস্ব প্রকল্পে সারের চাহিদা পুরণ করে স্থানীয় ভাবে কৃষকদের কাছেও সরবরাহ করছেন এবং কৃষকরা এটি ধান, সব্জী, পানের বরজ, ফলের বাগান, নার্সারী এমনকি মৎস্য খামারেও ব্যবহার করছেন। স্বল্প মূল্যের এই সার ব্যবহার করে কৃষিতে আশানুরুপ সুফল পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা ভার্মি কম্পোস্টের দিকে ঝুকে পড়েছেন। তাছাড়া কৃষি জমিতে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ব্যবহার বাদ দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে।

এ বিষয়ে দীপ্ত এগ্রোা বিডি লিমিটেড এবং এল.এ.এগ্রো লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার সেলিম অগ্নি জানান, স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ কৃষিখাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য আমরা কেঁচো সার তথা ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করি এবং কৃষক পর্যায়ে এটি ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

তিনি বলেন, বান্দরবনে আমাদের কাজু চারা উৎপাদন প্রকল্প এবং নাইখ্যাংছড়িতে আমাদের নিজস্ব গার্ডেনে বছরে চাহিদা ৪শ’ মেট্রিক টন। আমরা আমাদের নিজেদের চাহিদা পুরণ করার চেষ্টা করছি এবং পাশাপাশি অন্য কৃষকদের মাঝে স্বল্প মূল্যে এই সার সরবারহ করে রাসায়নিক সার ব্যবহারে সরকারের পাশাপাশি নিজেরাও নিরুৎসাহিত করছি। বাজারে পাওয়া ভার্মি কম্পোস্ট সার ক্ষেত্র বিশেষে গুনগত মান নিয়ে সন্দেহ থাকায় আমরা গুণগত মান বজায় রেখেই এই সার উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি আরও জানান, দীপ্ত ভার্মি কম্পোস্ট খামারটির মাসিক উৎপাদন ১শ’ মেট্রিক টনে উন্নীত করার কাজ চলছে। সরকার কৃষিতে এই সার উৎপাদন এবং ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই হিসেবে আর্থিক সাশ্রয়ী এবং লাভজনক বলেই সরকারের পাশে আমরা দাঁড়াতে চাই। স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা নিয়মিত আমাদের প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন এবং কৃষক পর্যায়ে এই সারের উপকারিতা নিয়ে নিরলস কাজ করছেন। তবে এই প্রজেক্টে সরকারি কোন সহযোগিতা তিনি এখনও পাননি বলে জানান।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাসান বলেন, ‘কেঁচো সার উৎপাদনে এপিজিক ও এন্ডিজিক নামক কেঁচো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলে মাটিতে অণুজীবের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাটিতে বাতাসের চলাচলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যেখানে রাসায়নিক সারে কেবল এক বা দুইটি খাদ্য উপাদান থাকে-সেখানে কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট)-এ রয়েছে যথাযথ সুষম খাদ্য উপাদান। এ সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকর ও পরিবেশ বান্ধব বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

আর কে- ০৬

 

 

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত