Saturday, May 18, 2024

নড়াইলে সংখ্যালঘুদের জমি দখলের অভিযোগ সাবেক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

- Advertisement -

সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজ, নড়াইল:

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের মাউলি গ্রামের বিল বালিচা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসি নিয়ে রাতের আধারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কৃষি জমি দখল করে ঘের কাটছেন অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা। এতে আতঙ্কের মধ্যে রাত যাপন করছেন ওই এলাকার কয়েক’শ কৃষি পরিবার।প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ইউনিয়নের বিল বালিচার বিলে ঘের কাটা স্থানে মানববন্ধন করেছে এলাকার কয়েক’শ কৃষক। এ সময় বক্তব্য দেন মাউলি ইউপির সাবেক মেম্বর তপন কুমার হাজরা, বর্তমান মেম্বর অশেষ সিকদার, নারী মেম্বর আয়না বেগম, কৃষক আকরাম মোল্লা, কামাল মন্ডল, মিটুল বিশ্বাস, এস এম বায়েজিদ হোসেন, অমরেশ বিশ্বাস, সুবোধ বিশ্বাস প্রমুখ। বক্তারা অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তাসহ তাকে সহযোগিতাকারি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসিদের গ্রেপ্তার পূর্বক উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন।
সরেজমিন খোজ নিয়ে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তার নাম মো. সাইফুল ইসলাম। তার বাড়ি ময়মনসিংহে। বিবাহ করেন পাশের কুমড়ি গ্রামের মধ্য পাড়ার অলিয়ার মোল্লার মেয়েকে। চাকুরি জীবনে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পেয়ে অবসরে যান। অবসরে যাবার পর তিনি আত্মীয়তার সূত্র ধরে মাউলি গ্রামে একটি বাড়ি করেন। সেখানে তিনি থাকেন না। বাড়ি দেখভালের জন্য লোক রাখা আছে। শ্বশুর বাড়ি এলাকায় ঘের করার পরিকল্পনা করেন। বেছে নেন কুমড়ি, মাউলি এবং শুক্ত গ্রামের কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে। এরা হলেন, কুমড়ি গ্রামের অলিয়র মোল্লার ছেলে রব মোল্লা (৪৫), ফসিয়ার খানের ছেলে আশরাফ খান, মরফুল খান, রকিবুল খান, মাউলি গ্রামের আইউব হোসেন সর্দার, শুক্ত গ্রামের এলাহী সর্দার। এলাকার মানুষ ত্রাস হিসেবে চেনেন। এদের নামে নানা ধরণের অভিযোগ ছাড়াও মামলা রয়েছে।

কৃষক এস এম বায়েজিদ হোসেন বলেন, কুমড়ি গ্রামের জামাই অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইফুল ইসলাম এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে রাতের আধারে ভেকু দিয়ে প্রায় ২০০ একর কৃষি জমি দখল করে ঘের কাটা শুরু করেন। তিনি বলেন, বেশিরভাগ জমি হিন্দু সম্প্রদায়ের। কৃষকরা বাধা দিতে গেলে ওই সন্ত্রাসিরা বিভিন্ন ভয় দেখায়। পরে তারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। গ্রামবাসি জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসিরা গা ঢাকা দিয়েছে।শুক্ত গ্রামের কৃষক সুবোধ বিশ্বাস বলেন, হিন্দুদের কৃষি জমি জবরদখল করে একজন সেনা কর্মকর্তা একজন আইনের লোক হয়ে বেআইনি কাজ করছেন। তিনি আবেগতাড়িত কন্ঠে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।বয়স্ক কৃষক অমরেশ বিশ্বাস বলেন, যে জমিতে ফসল ফলায়ে আমরা ছেলে মেয়ে নিয়ে বেচে আছি। সেই জমি জমি না কিনেই দখল করে ঘের কাটতিছে। এ কথা বলে তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা সম্বোধন করে বলেন, মাগো আমাদের বাচাও। আমরা দেশ ছেড়ে যাবো কোথায়?মাউলি ইউনিয়নের নারী সদস্য আয়না বেগম বলেন, যিনি এই জঘন্য কাজ করছেন তিনি একজন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা। এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসি দিয়ে এই গরীব হিন্দুদের কৃষি জমি দখল করে ঘের কাটাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, কুমড়ি গ্রামের শ্বশুর কুলের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি এতটা সাহস পেয়েছেন। আমরা এর বিচার চাই। মাউলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রোজি হক বলেন, জমি দখল করে ঘের কাটার অভিযোগ জেনেছি। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে (০১৭১১-৪৮২৩৭৮) একাধিকবার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
———রাতদিন সংবাদ/এ.এন-১২

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত