Friday, May 17, 2024

অভয়নগরে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্যকে গুলি করে হত্যায় গ্রেপ্তার হয়নি কেউ

- Advertisement -

অভয়নগর প্রতিনিধিঃ আমার বাবার দুই পকেটভরা টাকা ছিল। তোরা (হত্যাকারী)টাকা নিবি নিয়ে যা, বাবার প্রাণটা নিয়ে গেলি কেন?’ কথাগুলো তার মায়ের কোলে বসে বলছিলো নিহত নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য উত্তম সরকারের ছোট ছেলে হিরন্ময় সরকার।
ঘরের বারান্দায় বসে অঝোরে কাঁদছিলেন উত্তম সরকারের মা শেফালী সরকার (৫৭) এবং স্ত্রী শ্রাবন্তী সরকার (৩২)।

এসময় কাঁদতে কাঁদতে মা শেফালী সরকার বলছিলেন,‘আমার বাবার কোনো শত্রু ছিল না। নির্বাচন জেতাই আমার বাবার কাল হয়েছে।’ স্ত্রী শ্রাবন্তী সরকার বলছিলেন,‘কী কারণে উত্তমকে হত্যা করা হয়েছে জানি না। ওরতো কোনো শত্রু ছিল না। ওর পকেটে ৩০ হাজার টাকা ছিল। হত্যাকারীরা কোনো টাকা নেয়নি।’

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় নবনির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য উত্তম সরকারকে (৩৮) গুলি করে হত্যার কারণ উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত এখনও পর্যন্ত কাউকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।

তবে পুলিশ সুন্দলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য অর্ধেন্দু মল্লিককে থানায় রেখে জিজ্ঞাবাস করছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অর্ধেন্দু উত্তম সরকারের একমাত্র প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন। চতুর্থ ধাপে গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপজেলার সুন্দলী ইউপি নির্বাচনে তিনি অর্ধেন্দুকে ৬১ ভোটে পরাজিত করে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন।

গতকাল সোমবার রাত সোয়া আটটার দিকে উপজেলার হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে উত্তম সরকারকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহত ইউপি সদস্য উত্তম সরকার উপজেলার হরিশপুর গ্রামের অশান্ত সরকারের ছেলে।
উত্তমের কাকা স্বপন কুমার সরকার বলেন, সোমবার রাতে উত্তম সুন্দলী বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে হরিশপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন। তাঁর পেছনে অপর একটি মোটরসাইকেলে করে তিন ব্যক্তি যাচ্ছিল।

রাত সোয়া আটটার দিকে উত্তম হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে পেছনে আসা মোটরসাইকেল আরোহীরা তাঁর গতিরোধ করে। এরপর তারা সামনের দিক থেকে তাঁর বুকের বাঁ পাশে গুলি করে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। এতে উত্তম ঘটনাস্থলেই মারা যান। পুলিশ রাতেই মরদেহ উদ্ধার করে। আজ মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, সোমবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে সুন্দলী বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে একটি চায়ের দোকানের সামনের রাস্তায় দুটি মোটরসাইকেল এসে থামে। একটিতে ছিলেন উত্তম সরকার। অপরটিতে ছিলেন অজ্ঞাত তিনজন আরোহী। তাদের মুখে মাস্ক, একজনের হেলমেট এবং অপর দুইজনের মাথায় মানকি টুপি পরা ছিল । তারা চারজনে মিলে ওই চায়ের দোকান থেকে কফি পান করেন। এরপর তারা পুনরায় মোটরসাইকেলে করে সুন্দলী-রামসরা সড়ক দিয়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর উত্তমকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পুলিশ জানায়, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে সোমবার রাত থেকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) অভিযান শুরু করে। দোকানে কফি পান করা ওই তিজনকে স্থানীয়রা কেউ তাদের চেনেনা। কারা ওই তিনব্যক্তি।

অভয়নগর থানার পরিদর্শক একেএম শামীম হাসান বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ দাহনের পর এ ব্যাপারে মামলা হবে। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত হত্যার কারণ উদঘাটন করা যায়নি। তবে গত ইউপি নির্বাচন এবং আরও একটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

 

 

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত