Saturday, May 18, 2024

চৌগাছায় সাইফুল মেম্বরকে ভোট না দেয়ায় নির্যাতনের অভিযোগ

- Advertisement -

যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর সাইফুল ইসলাম বিশ^াসের বিরুদ্ধে ফের মানুষকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে তাকে ভোট না দেয়ায় হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা এক বৃদ্ধকে মারপিট করেছে মেম্বরের সহযোগীরা। একইদিন আরও দুইজনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভোটের পরের দিন (১২ নভেম্বর) মেম্বরের নির্দেশে তার লোকজন মারপিট ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) চৌগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বল্লভপুর গ্রামের হরিপদ রায়ের ছেলে সরজিত কুমার রায়।
এর আগে ২০১৫ সালে সাইফুল মেম্বরের নেতৃত্বে বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি কার্তিক বিশ্বাস ও সম্পাদক সরজিত কুমার রায়কে তুলে নিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। এক পর্যায়ে বল্লভপুর বাওড়ের শেয়ার অবৈধভাবে স্ট্যাম্প করে নেন সাইফুল মেম্বর ও তার সহযোগিতারা। ছয় বছর ধরে জিম্মি করে রেখেছিল। নির্বাচনে তার পক্ষে ভোট না করায় মারপিট ও হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন-চৌগাছা উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের কাওছার বিশ্বাসের ছেলে সাইফুল ইসলাম বিশ্বাস মেম্বর (৩৮), বল্লভপুর মাধবপুরপাড়ার জানালী হোসেনের ছেলে জামির হোসেন (৩৮), আরশেদ আলী (৪০) ও শাহজাহান আলী (৪৫), বল্লভপুর মাধবপুরপাড়ার হাসেম আলীর ছেলে ছাকের আলী (৩৩), বল্লভপুর মাধবপুরপাড়ার ছলেমানের ছেলে শুকুর আলী (৩৮), বল্লভপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে জনি মিয়া (২৪), একই গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে মহিনুর (৪০) ও তাদের সহযোগী অজ্ঞাত ৪/৫জন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১১ নভেম্বর চৌগাছা উপজেলার ১১ নম্বর সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর পদপ্রার্থী ছিলেন বর্তমান মেম্বর সাইফুল ইসলাম । ওই নির্বাচনে তার পক্ষে ভোট না করায় নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। ভোটে সাইফুল ইসলাম  বিজয়ী হন। তাকে ভোট দিইনি অভিযোগ তুলে আমাদের (হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা) উপর ক্ষুব্ধ হন। একই সাথে আমাদের ক্ষতি সাধনের ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এক পর্যায়ে ১২ নভেম্বর আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে বল্লভপুর মাধবপুরপাড়া তিন রাস্তার মোড়ে (আবুলের দোকানের সামনে) সাইফুল ইসলাম মেম্বরের নির্দেশে জামির হোসেনের নেতৃত্বে ছাকের আলী, আরশেদ আলী, শুকুর আলী ও শাহাজান আলীসহ আরো কয়েকজন সংঘবদ্ধ হয়ে আমার বড় ভাই অধীর কুমার রায় ওরফে বুধোকে (৭০) হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ আর বলতে থাকেন তোর যে বাপের ভোট দিয়েছিস, সে তো পাস করেনি, তুই এই গ্রামে আছিস কেন, গ্রাম ছেড়ে চলে যা। এ কথা বলেই হামলে পড়ে। এলোপাতাড়ি কিলঘুসি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। এ সময় আসামিরা সঙ্গে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামিরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। একই দিন (১২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বল্লভপুর বাজারে আন্টুর দোকানের সামনে আমার আরেক ভাই জগবন্ধু রায় ওরফে আকালেকে (৫৫) অকথ্য ভাষা গালিগালাজ করেন ৮ নম্বর আসামি মহিনুর। সাইফুল ইসলাম মেম্বরকে ভোট কেন দিইনি, সেই প্রশ্ন তুলে হাতুড়ি দিয়ে আমার ভাইয়ের (জগবন্ধু রায়) উপর হামলা চালায়। মাথা সরিয়ে নেয়ায় হাতুড়ির আঘাত লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করে। এ সময় আমাদের (হিন্দুপাড়া) লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিতে থাকে।
একই দিন (১২ নভেম্বর ২০২১) সকাল ৮টার দিকে দক্ষিণ বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আমার জ্যাঠাতো ভাই সাবেক মেম্বর গোবিন্দ কুমার রায়কে হত্যার চেষ্টা চালায় আসামি জনি মিয়া ও তার সহযোগিরা। সাইফুল মেম্বরকে ভোট না দেয়ার অভিযোগ তুলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাতের চেষ্টা করে। এ সময় উপস্থিত কয়েকজন গ্রামবাসী এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করে। আঘাত করতে ব্যর্থ হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একই সাথে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। একই দিন হিন্দুপাড়ার তিনজনকে হত্যাচেষ্টা ও প্রাণনাশের হুমকির বিষয়টি তাৎক্ষনিক মৌখিকভাবে পুলিশ সুপার ও ওসিকে জানানো হয়েছিল। তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছেন। ঘটনার আগে ও পর থেকে আসামি ও তাদের সহযোগিতাদের হামলা ও হুমকিতে হিন্দুপাড়ার বাসিন্দারা চরম আতংকে দিন পার করছেন।
চৌগাছা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ মিশ্র জয় বলেন, ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। একই সাথে  দ্রুত ঘটনার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযুক্ত  সাইফুল ইসলাম বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় আমি জড়িত নই। ভোটের পরের দিন আমার সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদেরকে মাফ চাইতে বলেছিলাম।’

বিশেষ প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত