যশোরের কেশবপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রাসেল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে করেছে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি। একইসাথে ঘটনায় জড়িত দুই জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছে কেশবপুরের হাসানপুর গ্রামের আব্দুর রহমান সরদারের ছেলে মাসুদ হোসেন (১৯) ও বিষ্ণুপুর গ্রামের আব্দুর রউফ মোড়লের ছেলে অহিদ হাসান (১৯)। তাদের দখল থেকে উদ্ধার হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় রাসেলকে গলা কেটে হত্যা করে তারা।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ আগস্ট সকাল ১০ টায় কেশবপুরে সাগড়দাড়ি চিংড়া পূর্বপাড়ার আয়শা বেগমের ধানক্ষেত থেকে সাবদিয়া গ্রামের মাজিদ মোড়লের ছেলে কলেজ ছাত্র রাসেল হোসেনের (২৬) লাশ উদ্ধার হয়। সে পড়াশুনার ফাঁকে ভাড়ায় মটরসাইকেল চালাতো। ১৬ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪ টায় ভাড়ায় মটরসাইকেল চালানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে কেশবপুরের উদ্দেশ্যে যায় রাসেল। রাত অনুমানিক ১১ টা ৫০ মিনিটে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ১৭ আগস্ট রাতে ঘোপসানা রোড তার মোটরসাইকেলটি পাওয়া গেলেও তাকে পাওয়া যায় না। পরের দিন সকালে লোক মারফত রাসেলের পরিবার জানতে পারেন চিংড়া ডেপার মাঠে রাসেলের লাশ পাওয়া যায়। এই সংক্রান্তে নিহত রাসেলের বাবা কেশবপুর থানায় মামলা করেন যার নাম্বার ৩।
ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় পুলিশ সুপার মামলাটি গোয়েন্দা শাখায় তদন্তভার ন্যান্ত করেন। ডিবি’র অফিসার ইনচার্জ জনাব রুপন কুমার সরকার, পিপিএম এর দিক-নির্দেশনায় এসআই শামীম হোসেন গোপন তথ্য সংগ্রহ করে আসামি শনাক্ত ও আসামি আটক অভিযান শুরু করেন। ৩০ অক্টোবর পুলিশ পরিদর্শক শাহীনুর রহমানের নেতৃত্বে এসআই শামীম হোসেন ও এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএম হাসানপুর ও বিষ্ণপুর সাগরদাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যার সাথে জড়িত সন্ধেহে উপরে উল্লেখিত মাসুদ ও ওহিদকে আটক করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, হত্যাকাজে ব্যবহৃত ১টি চাকু জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছে, আর্থিকভাবে লাভ হওয়ার মানসে ১৬ আগস্ট ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চাকু নিয়ে কেশবপুর দিয়ে খুলনায় যায়। সেখানে ছিনতাই করতে না পারায় রাত ১১ টায় খুলনা থেকে ট্রাকে করে চুকনগর আসে। তারপর ভিকটিম রাসেলকে ৩শ টাকা ভাড়া চুক্তিতে সাগরদাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে ঘটনাস্থল চিংড়া টেপার মাঠের মধ্যে রাসেলকে চাকু ও ছুরির ভয় দেখায়। রাসেল বাঁধ সাধলে চাকু দিয়ে পেটে আঘাত করে। নিহত রাসেল মোবাইল ফোনে তার বাচ্চার ছবি দেখিয়ে জীবন ভিক্ষা চাইলেও ঘাতক মাসুদ ও অহিদ তাকে জীবনে বাঁচতে না দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ঘাতকরা ধরা পড়তে পারে ভেবে মোটরসাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ঘোপসানা রোডে ফেলে দেয়। ১০/১৫ দিন পর ভিকটিম রাসেলের মোবাইল ফোনটি হাসানপুর বাজারের মুদি দোকানী শহিদুলের কাছে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে বলে তথ্য মেলে।
রাতদিন সংবাদ