Tuesday, May 14, 2024

লেবুতলায় চাচা-ভাইপোর অবৈধ হাটে লাখ লাখ টাকার খাজনা আদায়

টানা ছয় বছর ধরে যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নে সরকারি রাস্তা দখল করে চলছে সবজি বাজার। এই বাজারের নেই কোনো অনুমোদন। হয়নি কোনো টেন্ডার। সরকার পায় না কোনো রাজস্ব। তারপরও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল খাজনার নামে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। স্থানীয় চাচা ভাইপো সিন্ডিকেট সবজি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মনগড়া খাজনা উঠিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে।
প্রকাশ্যে অবৈধ বাজার বসালেও এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দাবি,প্রতিহাটে ৭০-৮০ হাজার টাকা উঠানো হয়। সেই হিসেবে মাসে তিন লাখ, বছরে ৩৬ লাখ ও ছয় বছরে দু’ কোটি ১৬ লাখ টাকা খাজনার নামে হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেটটি। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একাধিকবার জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
গত সোমবার সরেজমিনে লেবুতলা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, লেবুতলার তেঁতুলতলা- বারোবাজার রোডের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে বিশাল সবজির বাজার বসেছে। বাজার বসেছে যশোর-মাগুরা সড়কেও। ছিল হাজারো মানুষের উপস্থিতি। যশোরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন সবজির পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাজারের প্রবেশদারে হ্যান্ডমাইকে বলা হচ্ছে,‘খাজনা ছাড়া কেউ বের হবেন না’। এ ধরনের মাইকিং করেন রতন নামে একব্যক্তি। সবজি ওজনে মেপে কোনো রশিদ ছাড়াই খাজনা তোলেন অন্তত ১৪-১৫ জন। সাংবাদিকের উপস্থিতি টেরপেয়ে মাইক ফেলে সটকে পড়েন রতন।  কেউ কেউ ওজন মাপা যন্ত্র ফেলে উধাও হয়ে যান।
এসময় কথা হয়, সবজি কিনতে আসা চুড়ামনকাটির মনিরুল ইসলাম, যশোর শহরের বড় বাজারের সাজেদুর রহমান কাজল, আরমান হোসেন, পালবাড়ির মইদুল ও তৌহিদ, শরিয়তপুর থেকে আসা আসলামসহ অন্তত আরও ১০-১২ জনের সাথে। তারা বলেন, বাজার থেকে বেগুন, পেঁপে, পটল, ঢেঁড়স, কচুরলতি, উচ্ছে, ওল, ফুলকপি, বাধাকপি, কাঁচাঝাল, লেবুসহ বিভিন্ন সবজি মণ প্রতি তাদেরকে দিতে হচ্ছে ২০-২৫ টাকা। এছাড়া, প্রতি পিছ লাউ এক টাকা ও এক কাঁদি কাঁচকলা বাবদ তাদেরকে দিতে হচ্ছে ১০ টাকা করে। এর বাইরেও পৃথক জায়গা করা রয়েছে। সেখানে পণ্য রাখলে দুশ’ থেকে তিনশ’ টাকা করে দিতে হয় ওই সিন্ডিকেটকে। তারা আরও জানান, এই বাজারটি সরকারিকরণ হলে আরও সুবিধা বাড়তে পারে। তখন তারা স্বাচ্ছন্দের সাথে পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন।
অনেকেই পরিচয় গোপন রেখে জানান, স্থানীয় মোল্লাপাড়ার শহীদুল ইসলাম শহিদ ও তার ভাইপো আসাদুজ্জামান আশা মেম্বরের নেতৃত্বে এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাদের সাথে রয়েছেন শহীদের আরও চার ভাইপো সুমন মোল্লা, রতন মোল্লা, মিছির মোল্লা, রিয়াল মোল্লা, ঘোষপাড়ার মোহন মেম্বর, মিস্ত্রিপাড়ার সাহেব আলী ও হঠাৎপাড়ার তৌহিদ ড্রাইভার। প্রতি সোমবারই তারা বাজারে উপস্থিত থেকে টাকা ওঠান। বাজার শেষে সব টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
রশিদ ছাড়া কীভাবে টাকা তুলছেন মাইকিং করা রতন মোল্লা ও সুমন নামে দু’জনের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, তার চাচার নেতৃত্বেই এ টাকা ওঠানো হচ্ছে। বিস্তারিত আশা মেম্বার ভালো বলতে পারবেন। এই বলে আশা মেম্বারকে কল করেন। ২০ মিনিট পর আশা মেম্বার আসছেন বলে রতন মাইক নিয়ে সটকে পরেন। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত শহীদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ওই বাজার থেকে টাকা উঠানোর বিষয়ে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি বলেন, এলাকার চাষিরা বাজারে সবজি এনে বিক্রি করেন। এতে করে রাস্তা ময়লা হয়। ওই ময়লা পরিষ্কারের জন্যে এলাকার ছেলেরা কিছু টাকা আদায় করে। ওই বাজারে তেমন কিছুই হয়না। একই কথা বলেন আশা মেম্বারও
এ বিষয়ে লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলীমুজ্জামান মিলন বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তেঁতুলতলায় অবৈধভাবে সবজির হাট বসছে। প্রথম দু’ বছর বাবুল ও ইকতার নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। পরে তাদের কাছ থেকে শহিদ ও আশা মেম্বর হাটের দায়িত্ব ছিনিয়ে নিয়ে দেখভাল করছেন। তিনি আরও জানান এ হাট সরকারি নথিভুক্ত না হওয়ায় কোনো টাকা আসে না। অথচ প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খাজনা উঠানো হয়।  তবে, এ বিষয়ে একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন বলেন, তিনি অল্প কয়েকদিন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। লেবুতলায় একটি স্থানে অবৈধভাবে হাট বসছে বলে তার কাছে তথ্য এসেছে। শিগগির তিনি সরেজমিনে গিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
স্থানীয়দের বক্তব্য, বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে যশোরের মডেল লেবুতলা ইউনিয়ন। এখানকার উৎপাদিত সবজি বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। লেবুতলায় যদি সরকারিভাবে একটি হাটের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে এই মডেল ইউনিয়নটিতে।
সূত্রঃ গ্রামের কাগজ
- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত