Monday, May 20, 2024

কেশবপুরে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ, এস, এইচ, কে সাদেকের ১৪তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত 

মোঃজাকির হোসেন, কেশবপুর,প্রতিনিধিঃ কেশবপুরে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ, এস, এইচ, কে সাদেকের ১৪তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়াও মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯সেপ্টেম্বর আওয়ামিলীগের দলীয় কায্যালর জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা ও কেশবপুর উপজেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি এ এম রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামিলীগের সহ সভাপতি তপন কুমার মন্টু, এইচ এম আমির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মুক্ত, গৌতম রায়,দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চন্দ্র সাহা, জেলা পরিষদের সদস্য ও সাবেক শিক্ষা মন্ত্রীর ভাই হাসান সাদেক, পাঁজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি চেয়াম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক বি এম শহিদুজ্জামান শহিদ, উপজেলা মহিলালীগের সভানেত্রী রাবেয়া ইকবাল,  ছাত্রলীগের আহবায়ক আজিহারুল ইসলাম মানিক প্রমূখ। উল্লেখ্য, এ এস.এইচ.কে.সাদেক একজন সফল সরকারী আমলা ও রাজনীতিবিদ ছিলেন । পুরো নাম আবু শরাফ হিজবুল কাদের সাদেক। ১৯৩৪ সালের ৩০ এপ্রিল যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা ইয়াহিয়া সাদেক ছিলেন বাংলা সরকারের যুগ্ম কমিশনার। মাতা আসগারুন্নেসা সাদেক। ৭ ভাই ও ২বোনের মধ্যে তিনি ৩য়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে যেসব ব্যক্তিবর্গ তাঁর প্রশাসনকে সমুজ্জ্বল করেছিলেন এবং যথাযথ দায়িত্ব পালন করে রাষ্ট্রকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে যাঁদের অসামান্য অবদান ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেক। এ.এস.এইচ.কে.সাদেক ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৫৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৫ সালে এম.এ পাস করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকনমিক্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০-৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাফিল ফাউন্ডেশন থেকে ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে একজন সিএসপি অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি নীলফামারী ও নারায়ণগঞ্জে মহকুমা প্রশাসক ছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক এবং ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সচিব এবং ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির মূখ্য সচিব ছিলেন। সরকারি চাকুরি জীবনে তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নিপা)-এর পরিচালক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘে ইউনিডোর প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ এবং আঞ্চলিক শিল্প উপদেষ্টা হিসেবে ১৯৭৪-১৯৭৮ সালে কুয়ালালামপুরে, ১৯৮৫-১৯৯০ সালে ব্যাংককে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ২৫ মার্চ ১৯৮৮ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর শিক্ষাক্ষেত্রে এক আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপদ্ধতির সাথে সমন্বয় রেখে দেশের সকল ফলাফলে ‘জিপিএ’ সিস্টেম চালু করার পাশাপাশি সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনসহ শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল আকাশ ছোঁয়া। তিনি ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি সরকারি হিসাব এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিল এ এস এইচ কে সাদেকের বিশেষ অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা শহরের এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত এ এস এইচ কে সাদেকের সরকারি বাসভবন ১নং টেনামেন্ট হাউজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম ঘাঁটি। মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই তাঁদের অস্ত্র গোলাবারুদ এই সরকারি বাসভবনে রাখতেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রদানসহ সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করতেন। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে স্বীকৃতি প্রদান এবং সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর অধীনে অন্তর্ভুক্ত করতে সফল হয়েছিলেন। যার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ২০১০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। ব্যক্তি হিসেবে এ এস এইচ কে সাদেক ছিলেন অমায়িক, নম্র, ভদ্র এবং কখনো পরনিন্দা করতেন না। কখনো অন্যের গালমন্দ করে নিজেকে হাইলাইট করেননি। তিনি কাজে বিশ্বাসী ছিলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ছিলেন পর্বত সমান ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তৃণমূল নেতাদের কথা শুনতেন এবং তাদের কথার গুরুত্ব দিতেন।  নিজের এলাকায় দলকে সুসংগঠিত করার জন্য সবসময় সোচ্চার থাকতেন। দলীয় নেতাকর্মীদের দুর্নীতিমুক্ত রাখতে তিনি সবসময় খুব কঠোর ছিলেন। অবৈধ কোনো নিয়মনীতি তিনি কখনো মেনে নেননি বা প্রশ্রয় দেননি।  আসলে তাঁর মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শচেতনা ও দৃঢ় মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিত্ব। যেটা একজন আদর্শ নেতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা উচ্চমানের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য হয়। ২০০৭ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত