Friday, May 17, 2024

মায়ের কষ্টের ধান পুড়িয়ে দিল মাদকসেবী পিতা

- Advertisement -

‘স্বামীর অত্যাচারে ঘর ছেড়ে বাপের বাড়িতে যেয়ে শিশু সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য বড় কষ্ট করে এক বিঘা জমিতে ধান করেছিলাম। এই গরমের মধ্যে সন্তানদের সাথে নিয়ে পাকা ধান মাঠে শুকিয়ে গাঁদা করে রেখেছিলাম বুধবার দুপুরে। ওই রাতেই মাদকসেবী স্বামী গাঁদায় আগুন লাগিয়ে আমার সব ধান পুড়িয়ে দেয়। এখন আমি সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবো কী করে’!
কান্নাভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া গ্রামের অসহায় কৃষক সুফিয়া বেগম। তিনি জানান, প্রায় ১৬ বছর আগে উপজেলার পার্শ্ববর্তী কুশনা ইউনিয়নের মামুনশিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু, স্বামী একজন মাদকসেবী। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে এক মেয়ে ও দু’ছেলে। স্বামী ঠিকমতো খাবার দিতে না পারায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে তিনি সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতেন। এর মধ্যেও জাহাঙ্গীর তাকে মারপিট করতেন। আট বছর আগে জাহাঙ্গীর হঠাৎ বাড়ি থেকে চলে যান। তিন মাস আগে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। এবার সুফিয়া বেগমের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন জাহাঙ্গীর। বাধ্য হয়ে সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে সবার কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে নেমে পড়েন কৃষি কাজে, হয়ে ওঠেন কৃষক।
তিনি জানান, স্বামী জাহাঙ্গীর কয়েকদিন আগে তাকে নিতে আসেন। কিন্তু, নিজের জীবন ও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি তার সাথে না যেয়ে বাবার বাড়িতেই থেকে যান। এসময় স্বামী তাকে হুমকি দিয়ে চলে যান। এরই মধ্যে এক বিঘা জমির ধান পেকে যায় সুফিয়ার। বুধবার শিশু সন্তানদের সাথে নিয়ে মাঠে শুকানো সেই ধান গাঁদা করে রাখেন তিনি। কিন্তু, মাদকসেবী স্বামী ওই রাতে সেই গাঁদায় আগুন ধরিয়ে দেন। নিমেষেই সব ধান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সন্তানদের মুখের আহার ধ্বংস করায় দিশেহারা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘এই খাঁ খাঁ রোদে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে কাটা ধান শুকিয়ে মাঠেই পাশাপাশি গাঁদা দিয়ে রেখেছিলাম। সেই ধান পুড়িয়ে দিল! এখন আমার সন্তানদের কী হবে! ওরা খাবে কী! তিনি জানান, এ ব্যাপারে স্বামী জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
কোটচাঁদপুর থানার ওসি মঈন উদ্দীন বলেন, ‘অভিযোগটি পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের অপকর্মের কোনো ছাড় নেই’।

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত