Sunday, May 19, 2024

ক্যান্সারে স্বামীকে হারিয়ে এখন মাথা গোজার ঠাঁই নেই বাঘারপাড়ার ফিরোজার

- Advertisement -

বাঘারপাড়া(যশোর) থেকে আজম খাঁনঃ মরন ব্যাধি ক্যান্সারে স্বামীকে হারিয়ে সন্তাদদেরকে নিয়ে বাঘারপাড়ার ফিরোজা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সারা দিন বাড়িতে থাকতে পারলেও রাত হলে ঘুমাতে যায় অন্যের বাড়িতে। মাত্র ছয় বাঁন্ডিল টিন হলে তারা মাথা গোজার ঠাইটুকু পেতো। গরীবের মেয়ে ফিরোজার বিয়ে হয়েছিল এক দিনমজুর বর্গা চাষির সঙ্গে। ফিরোজার স্বপ্ন ছিল স্বামী-সন্তানদেরকে নিয়ে ভাল থাকার। বাসর রাত থেকেই স্বামীকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার। বাসর রাতে ঘরের চালা দিয়ে চাঁদের আলো দেখেছিল ফিরোজা। সেদিন থেকেই স্বামীকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল ইট-পাথরে নির্মিত ছাদের তলে শোয়ার। স্বপ্ন অনুযায়ী এগিয়ে চলছিল জীবন যুদ্ধ। ক্ষুৎ-পিপাসায় কাতর হলেও সে রাতের স্বপ্ন কখনও ভোলেনি সে। দারিদ্রের কষাঘাতে নিষ্পেষিত ফিরোজা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখাকে স্বপ্নই ভাবে না, সে রাতে জেগে জেগে যে স্বপ্ন দেখেছিল সে স্বপ্নকে পুজি করে পরিশ্রমী স্বামীকে নিয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে ছিল। দু’টি সন্তান নিয়ে সংসার চালিয়ে ঘরেরকথা স্বপ্ন অনেকপ্রকার এগিয়ে যাওয়ার মুহুর্তে জীবন সংসারে ক্যান্সার নামক জলচ্ছাস সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেল। ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষিত করার প্রবল ইচ্ছা কাজ করে তার অন্তরে। ফিরোজা জানায়, সে ২০০১ সাল এ বাড়িতে বউ হয় আসে। বাসর ঘর থেকেই রাতের আকাশর ‘চাঁদ-তারা’ দেখেছিল সে। ঝড়-বৃষ্টিতে কাঁথা-বালিশ বুকের মধ্যে নিয়ে কত যে রাত কেটেছে তার, সেসব কথা মনে করে এ প্রতিবেদকের সামনে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে ফিরোজা। স্মৃতিচারণে সে জানায়,‘কর্মঠ স্বামী’ ছিল তার একমাত্র সম্পদ। তিনি বলেন,” তখন থেকেই দু’জন শুরু করি দিন মজুর হিসাবে। ছেলে মেহেদী দশম শ্রেণীতে পড়ে ও মেয়ে মাহমুদার বয়স এখন দুই বছর। ভালই চলছিল আমাদের সংসার। ২০১৯ সাল জমানো টাকা দিয়ে তিন রুম বিশিষ্ট ঘরের কাজ শুরু করি। ঘরের দেওয়াল পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পেরেছি। হঠাৎ সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। স্বামীর কন্ঠনালীতর ধরা পড়ে ক্যন্সার। জমানো সঞ্চয় আর ধার-দেনা করে তাঁর চিকিৎসায় সবই শেষ করেও বাঁচাতে পারলাম না। রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন মাস আগ চলে গেলেন না ফেরার দেশে”। এ সময় তাঁর দুগাল বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুজল। অশ্রুশিক্ত নয়নে তিনি আরও বলেন,“এখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে পিতার বাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে। পিতাও দিন মজুর অসহায় ও বদ্ধা। ফিরাজা বেগম যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া গ্রামর মৃত ওবায়দুলের স্ত্রী। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,এ গ্রামের শামছুর বিশ্বাসের ছেলে ওবায়দুল। পেশায় সে একজন বর্গা চাষী ও দিনমজুর ছিল। ওবায়দুলর সম্পদ বলতে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বসত বাড়ির তিন শতাংশ জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই পরিবারকে সুখে রাখতে শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম। পরিশ্রমী এই ওবায়দুল সকালে কৃষি কাজ, দুপুরে ভ্যান গাড়ীকরা করে বেকারীর পণ্য বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করত । আবার বিকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বর্গা জমিত কাজ করত। এ ছাড়াও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রতি বছর একটা গরু কিনত। উদ্দেশ্য কুরবানির ঈদে বেশী দামে বিক্রি করে টাকা জমাবেন। এ ভাবেই কেটে গেছে ১৯টি বছর। ফিরাজার ছোট ভাই আমির আলী বলেন, “আমার দুলাভাই মারা যাওয়ায় ঘরটাও এখন শেষ করতে পারছেন না আমার বোন, আমরাও গরীব মানুষ । সংসার চালাতে এসএসসি পরীক্ষার্থী ভাগ্নে মেহেদিও শুরু করেছে ‘রাজমিস্ত্রীর জোগাল’ এর কাজ। সারা দিন বাড়িতে থাকতে পারলেও রাত হলে ঘুমাতে যায় অন্যের বাড়িতে। মাত্র ছয় বাঁন্ডিল টিন হলে তারা মাথা গোজার ঠাইটুকু পেতো। সমাজের বিত্তবানদের কত সম্পদইতো অপচয় হয় বা বিলাশিতায় ব্যায়িত হয়। সমাজের কেউ কি নাই এ অসহায় পরিবারের পাশে দাড়ানোর! তবে কি মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এ কথাটি এ সমাজে হারিয়ে গেল?” দু’সন্তানের অসহায় জননী ফিরোজা তার এতিম সন্তানদের মাথা গোঁজার ঠাইটুকু ঢেকে দেওয়ার জন্য মাত্র কয়েক বান্ডিল টিন প্রাপ্তির আশায় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের এবং সমাজের হৃদয়বান ব্যাক্তিদের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত